মাইগ্রেন :মাথাব্যথার মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথা অধিকতর তীব্র। এ ধরনের ব্যথা মাথার এক পাশ দিয়ে শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। এই ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার পাশাপাশি বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা উচিত। তবে মেডিটেশন, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা; কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা, উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ পরিহার; পিসি ও টিভির সামনে বেশিক্ষণ না থাকা, প্রচুর পানিপান ইত্যাদি মাইগ্রেনে বেশ উপকারী।
ক্লাস্টার : ক্লাস্টার মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হয়, তবে আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বাড়ে। ব্যথা এক পাশে শুরু হয়ে অনেক সময় চোখের পেছনের দিকেও প্রবাহিত হয়ে তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় নাক, চোখ বা ব্যথার স্থান লাল বর্ণও ধারণ করতে পারে। তীব্র আলো, ঘ্রাণ বা গন্ধ এবং শব্দে এ ধরনের মাথাব্যথা বেড়ে যায়। মাইগ্রেনের চিকিৎসা এবং ক্লাস্টারের চিকিৎসা একই। তবে তীব্র ব্যথা হলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ‘ভেরাপামিল’ জাতীয় ওষুধ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া অ্যালকোহল, ধূমপান ত্যাগ, সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস এসব সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
সেকেন্ডারি :ব্যথার উৎস যখন মাথার বাইরে থাকে, তখন তাকে সেকেন্ডারি মাথাব্যথা বলে। যেমন- গ্লুকোমা, দাঁতের সমস্যা, আঘাত, মস্তিস্কের টিউমার, মৃগী রোগ, ব্রেনের রক্তনালিতে ইনফেকশন ইত্যাদি।
কারও এ ধরনের মাথাব্যথা থাকলে বিলম্ব না করে একজন স্নায়ু বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে যেসব কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে, তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বিলম্ব করলে বরং জটিলতা বাড়ে।
সাইনাসের প্রদাহ :মাথার হাড়ের মধ্যে অবস্থিত কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে, যাকে বলে সাইনাস। চোখের পেছনে, নাকের হাড়ের দুই পাশে এ রকম ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যাতে সর্দি জমে সাইনোসাইটিস বা প্রদাহ হয়। ফলে বাতাস আটকে যায় এবং মাথাব্যথা করে। এ মাথাব্যথা কপাল বা গালের দু’দিকে কিংবা চোখের পেছনে হয় এবং কিছুটা জ্বর বোধ হয়।
সাইনাসজনিত মাথাব্যথায় অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করে। এ ছাড়া গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা গামলায় গরম পানি নিয়ে নাক দিয়ে বাষ্প টেনে নিলে আরাম পাওয়া যায়। খুব বেশি মাথাব্যথা করলে এক টুকরো কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে কপাল, চোখের ওপর বা নাকের দুই পাশে ছ্যাঁক দিলে সাইনাসের বদ্ধতা কাটার পাশাপাশি আরাম পাওয়া যায়।
হরমোনাল :নারীদের ঋতুকাল, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হয়। তখন মন-মেজাজ পরিবর্তন, এমনকি মাথাব্যথাও হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট সেবনের পর হরমোনের পরিবর্তনগুলোর কারণেও অনেকের মাথাব্যথা বেড়ে যায়। নারীদের মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে। এর চিকিৎসায় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি উপকারে আসতে পারে। এ সময় টেনশনমুক্ত দৈনন্দিন জীবন নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত ঘুম, পানিপান ইত্যাদি বেশ সহায়ক।
অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন, চা-কফি, অনিয়মিত ঘুম এবং অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় বেশিক্ষণ থাকা, অতিরিক্ত শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকা ও সময়মতো না খাওয়া, যে কোনো ধরনের মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথাব্যথার কারণ। তাই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকলে মাথাব্যথা বেশিরভাগ কমে আসবে।
হজমে গণ্ডগোলজনিত মাথাব্যথা :হজমে গণ্ডগোলের কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় গ্রহণ করা খাবারের প্রভাবে এমন হয়। আবার বিপরীতভাবে ক্ষুধার কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। এ ছাড়া ফুড অ্যালার্জির কারণেও এমন মাথাব্যথা হতে পারে। প্রায়ই এমন উপসর্গ দেখা দিলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত।
ক্যাফেইনের প্রভাব :প্রচুর কফি পানের অভ্যাস থাকলে সময়মতো কফি না পান করতে পারলে এক ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। এমন অবস্থা দেখা দিলে ধীরে ধীরে কফি পান ত্যাগ করা উচিত। কারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইন এক ধরনের নেশা উদ্রেককারী বস্তু।
আকাশপথে ভ্রমণের সময় মাথার এক পাশে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে, যাকে এয়ারপ্লেন হেডেক বলে। আবার অনেকের আকাশপথে ভ্রমণ খুব কঠিন না হলেও গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রতি ১২ জনের একজন এয়ারপ্লেন হেডেকে ভোগে।
[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]