আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ ৭০ বছর পরে এই প্রথম ব্রিটেনের সিংহাসনে বসতে চলেছেন নতুন রাজা। দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে তার বড় ছেলে প্রিন্স চার্লস ব্রিটেনের পরবর্তী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হবেন। আজ শনিবার তার রাজা হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। রাজা হওয়ার আগে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে। নতুন রাজা হয়ে নানা সুবিধা পাবেন চার্লস। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে অভিষেকের পরেই একাধিক ক্ষমতা পাচ্ছেন চার্লস। নতুন রাজা বছরে দুইবার নিজের জন্মদিন পালন করার সুযোগ পাবেন।
গাড়ি চালানোর জন্য কোনো লাইসেন্স লাগবে না রাজা তৃতীয় চার্লসের। বিদেশ সফরে গেলেও তার পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। দেশটির নিয়ম অনুসারে, রাজাই দেশের সবাইকে রাজা চার্লস যেসব লাইসেন্স এবং পাসপোর্ট দেন। রাজা হিসেবে বছরে দুদিন নিজের জন্মদিন পালন করতে পারবেন চার্লস। প্রথা অনুযায়ী, জন্মতারিখে ব্যক্তিগতভাবে জন্মদিন পালন করবেন রাজা। তারপরে জুন মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার সর্বসমক্ষে ফের রাজার জন্মদিন পালন করা হবে। এই দিনে ১ হাজার ৪০০ সেনা, ২০০টি ঘোড়া এবং ৪০০ জন সংগীতশিল্পী সবাই মিলে রাজার উদ্দেশে বিশেষ শোভাযাত্রা করবেন। ব্রিটেনের ডলফিন, হাঁসসহ অন্যান্য জলচর প্রাণীদের ওপরেও শাসনের অধিকার থাকবে রাজার। যে সংস্থাগুলো তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগান দেবে, তাদের বিশেষ ওয়ারেন্ট দেবেন প্রিন্স চার্লস। রাজাকে নিয়ে কবিতা লেখার জন্য পোয়েট লরিয়েট থাকবেন। ১০ বছর অন্তর রাজকবি বদল করা হয়।
Absolut Media
মাত্র কিছুদিন আগেই ব্রিটেনের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তাদের সবার রানির নামে শপথ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রানির মৃত্যুর পর শপথ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রাজা তৃতীয় চার্লসের নামে শপথ নেবেন লিজ ট্রাসের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। তবে রাজা হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। কিন্তু আইন প্রণয়ন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠকসহ সবকিছুই করতে হবে তাকে। চার্লস এখন ৫৬টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও ২৪০ কোটি মানুষের সংগঠন কমনওয়েলথের প্রধান হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাজা। এ দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টিগা ও বারমুডা, বাহামা, বেলিজ, কানাডা, গ্রানাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউ গিনি, সেন্ট ক্রিস্টোফার অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস, নিউজিল্যান্ড, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং ট্যুভালু।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আজ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজা হয়েছেন তার পুত্র তৃতীয় চার্লস। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হবে আজ শনিবার। রীতি অনুযায়ী রানির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সিংহাসনে আসীন হয়েছেন তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী চার্লস—যিনি এতদিন ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস। মনে করা হচ্ছে, লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে রাজা বলে ঘোষিত হবেন। অ্যাকসেশন কাউন্সিল নামে একটি আনুষ্ঠানিক পরিষদের সামনে এ অনুষ্ঠান হবে। এক বিবৃতিতে রাজা বলেছেন, প্রিয় মায়ের মৃত্যু ছিল তার জন্য এক ‘বড় দুঃখের মুহূর্ত’। রাজা বলেন, ‘এক জন প্রিয় রানি এবং প্রিয়তম মায়ের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি জানি সারা দেশ, রাজ্য ও কমনওয়েলথ, এবং সারা বিশ্বের অগণিত মানুষ তার মৃত্যুকে গভীরভাবে অনুভব করবেন’। রাজপরিবার এখন শোক পালন করছে এবং রাজা তৃতীয় চার্লস স্কটল্যান্ডে বালমোরাল প্রাসাদ ত্যাগ করে লন্ডন ফিরে আসেন। রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকালই রাজা চার্লসের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল। এরপর তার প্রথম ভাষণ দেওয়ার কথা।
Aniview:
নতুন রাজাকে কী নামে ডাকা হবে?
তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। এটাই হলো নতুন রাজার নেওয়া প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। চার্লস তার চারটি নামের যে কোনো একটি বেছে নিতে পারতেন—চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। পদবি পরিবর্তন কেবল তার একার ক্ষেত্রেই ঘটছে না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেও প্রিন্স উইলিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হবেন না। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে অবশ্য তার বাবার অন্য আরেকটি পদবি ‘ডিউক অব কর্নওয়াল’ পেয়ে গেছেন। তার স্ত্রী ক্যাথরিন পরিচিত হবেন ‘ডাচেস অব কর্নওয়াল’ হিসেবে। চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবি আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবি হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানির স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
অভিষেক
অভিষেক হলো রাজা হিসেবে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ধাপ, যখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরবেন। তবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, তাই সম্ভবত খুব দ্রুত এই অভিষেক অনুষ্ঠান হবে না। রানি এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেছিলেন ১৯৫২ সালে, কিন্তু ১৯৫৩ সালের জুনের আগে তার অভিষেক হয়নি। গত ৯০০ বছর ধরে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার ছিলেন প্রথম রাজা, যার অভিষেক হয়েছিল সেখানে। আর চার্লস হবেন ৪০তম। এটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি। আনুষ্ঠানিকতার চূড়ান্ত পর্বে তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট অ্যাডওয়ার্ড মুকুট স্থাপন করবেন। এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। টাওয়ার অফ লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রাখা আছে, এটি তার মধ্যমণি। একমাত্র রাজা বা রানির অভিষেকের সময় এটি তারা পরেন (এই কারণে নয় যে, এটির ওজন ২ দশমিক ২৩ কিলোগ্রাম)।
রাজকীয় বিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান না হলেও অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের খরচ সরকার বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়। এই অনুষ্ঠানে গানবাজনা হয়, হয় পাঠ এবং রীতি পালন। ব্যবহার করা হয় কমলা, গোলাপ, দারুচিনি, কস্তুরি এবং অম্বর। পুরো দুনিয়ার সামনে নতুন রাজা অভিষেক শপথ গ্রহণ করবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার সময় তিনি নতুন দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে রাজদণ্ড গ্রহণ করবেন। আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি তার মাথায় খাঁটি সোনার মুকুট পরিয়ে দেবেন। রাজা চার্লস এবং রাজপত্নী বাকিংহাম প্রাসাদে উঠবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে তারা লন্ডনের ক্ল্যারেন্স হাউজ এবং গ্লস্টারশায়ারের হাইগ্রোভে থাকতেন।
কোহিনুর উঠবে ক্যামিলার মাথায়
ব্রিটেনের সংবাদপত্র ডেইলি মেল বলছে, চার্লস যখন রাজা হবেন, তখন তা ক্যামিলার মাথায় বিখ্যাত হীরে কোহিনুর মুকুটে শোভা পাবে। বিশ্ববিখ্যাত কোহিনুর এখন টাওয়ার অব লন্ডনের সংগ্রহশালায় রাখা থাকে। কোহিনুরের পাশাপাশি অনেক হীরে সেখানে দেখতে পান দর্শকরা। কিন্তু ইতিহাস ও সৌন্দর্য মিশিয়ে কোহিনুরের আবেদন আলাদা। সদ্যপ্রয়াত রানি এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জের অভিষেকের সময় তৈরি করা হয়েছিল প্ল্যাটিনামের রাজমুকুট। তাতে বসানো হয় কোহিনুর। দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা প্রথম এলিজাবেথ সেই মুকুট পরেন। কোহিনুর এখন ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেটের হীরে। ভারতে পাওয়া গিয়েছিল এই হীরে। বহুবার হাতবদল হওয়ার পর ব্রিটিশরা যখন পাঞ্জাব অধিকার করে, তখন তারা কোহিনুর পায়। সেই থেকে তাদের কাছেই আছে এই হীরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।