কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের সময় ঘরে আটকে পড়েছিল পৃথিবী। মানুষ দীর্ঘ সময় বাসায় বসে ভেবেছে, কীভাবে সময় কাটানো যায়। অনলাইনে যোগাযোগের নানা উপায় বেরিয়েছে এ সময়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছে মানুষ, তবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সামাজিক সবকিছু থেকে।
ঠিক এ সময় ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেন। কোভিডের কারণে ঘরে আটকে পড়া কাউকে নিয়ে নয়, মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া ছয় নভোচারীর গল্প লিখলেন তিনি। মহাকাশ স্টেশন প্রতিনিয়ত ঘুরছে পৃথিবীকে ঘিরে। ফলে এ স্টেশনে থাকা নভোচারীরা প্রতিদিন ১৬টি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন। এই নভোচারীরা বাধ্য হয়ে পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁদের সামনে থাকে নীল পৃথিবী। এই পৃথিবী একদিকে সুন্দর, আরেকদিকে ভঙ্গুর। জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর সময় ঘনিয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে দেখা পৃথিবীর সৌন্দর্য ও ভঙ্গুরতা নিয়ে ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে লিখেছেন উপন্যাসিকা অরবিটাল। এটি হার্ভেকে এনে দিয়েছে সম্মানজনক ম্যানবুকার পুরস্কার। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড (৬৪ হাজার ডলার)।
হার্ভে বলেছেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখা একটা শিশুর আয়নায় তাকানোর মতো। যে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করে আয়নায় থাকা মানুষটা সে নিজেই।’ বইটি লেখার জন্য হার্ভে মহাকাশচারীদের লেখা বই পড়েতেন। নিয়মিত দেখতেন মহাকাশ স্টেশনের লাইভ ক্যামেরা। এভাবেই অরবিটাল উপন্যাসিকাটির প্লট তৈরি হয়েছে।
এই উপন্যাসের সঙ্গে পৃথিবীর মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। তিনি বলেছেন, উপন্যাসটি ঠিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নয়, তবে পৃথিবীকে দেখলে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সত্যটুকু বোঝা যায়। হার্ভে এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন—পৃথিবীর পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, অন্য মানুষের মর্যাদার বিরুদ্ধে, অন্য জীবনের বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলেন না, তাঁদের। যাঁরা শান্তির পক্ষে কথা বলেন, আহ্বান জানান এবং কাজ করেন, তাঁদের।
অনিদ্রা নিয়ে আগে চারটি উপন্যাস ও স্মৃতিকথা লিখেছেন হার্ভে। ২০২০ সালের পর তিনিই প্রথম ব্রিটিশ লেখক, যিনি বুকার জিতলেন। এ পুরস্কার যেকোনো দেশের ইংরেজি ভাষার লেখকদের জন্য উন্মুক্ত। বিখ্যাত অনেক লেখকই এর আগে বুকার জিতেছেন। ইয়ান ম্যাকইওয়ান, মার্গারেট অ্যাটউড, সালমান রুশদি ও হিলারি ম্যানটেল এই পুরস্কার পেয়েছেন। হার্ভের ১৩৬ পৃষ্ঠার উপন্যাসিকাটি ম্যানবুকারজয়ী অন্যতম সংক্ষিপ্ত বই।
১৯৬৯ সালে প্রথম বুকার পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিলেন আইরিশ লেখক পল লিঞ্চ ‘প্রফেট সং’-এর জন্য। পুরস্কার পেয়ে হার্ভে অভিভূত হয়েছেন। জানিয়েছেন, এ পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি প্রথমে ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি একটি নতুন বাইকও কিনতে চান। আর বাকি টাকা দিয়ে ঘুরতে যাবেন জাপানে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী গ্যাবি উড পৃথিবীর ভঙ্গুরতার উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক সংকটের এই বছর (২০২৪) সম্ভবত রেকর্ডকৃত ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। লেখক ও শিল্পী এডমন্ড ডি ওয়াল ছিলেন বুকারের পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘অরবিটাল একটি বিস্ময়কর উপন্যাস। এ বই বিশ্বকে আমাদের সামনে অদ্ভুত ও নতুন ধাঁচে তুলে ধরেছে।’
পুরস্কারের জন্য জমা পড়েছিল ১৫৬টি উপন্যাস। এর মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে বেছে নেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পাঁচ চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে। সবাইকে পেছনে ফেলে বুকার ২০২৪ জিতেলেন ব্রিটিশ লেখক হার্ভে। ২০১৯ সালের পর তিনি প্রথম বুকারজয়ী নারী। এ বছরের শর্টলিস্টে থাকা পাঁচজন লেখকের সবাই অবশ্য নারী।
বুকার পুরস্কারের ৫৫ বছরের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। বলে রাখা প্রয়োজন, এ পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে লেখকদের লিঙ্গ পরিচয় বা জাতীয়তার মতো বিষয়গুলো বিচারকেরা একেবারেই হিসাবে রাখেন না। অরবিটালকে পুরস্কারের জন্য বেছে নিতে বিচারকেরা পুরো একটা দিন ব্যয় করেছেন। বিচারকদের সর্বসম্মতিতে এই পুরস্কার পেয়েছে অরবিটাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।