জুমবাংলা ডেস্ক: ইভ্যালিকাণ্ডের পর পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ই-কমার্স গ্রাহকদের অর্থ চলতি সপ্তাহ থেকে ছাড়ের নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে থাকা মামলার হালনাগাদ তথ্যের অভাবে অর্থছাড়ে আবার জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলার হালনাগাদ তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ তথ্য মন্ত্রণালয়ে জানাতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার আর্থিক সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ই-কমার্স খাতের ভোক্তাদের আটকে থাকা অর্থ দ্রুত ছাড়ের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মামলা নেই এমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভোক্তাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
গতকাল ই-কমার্স খাতের কারিগরি কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সমন্বয়ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলার হালনাগাদ তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তাই ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে পড়া গ্রাহকের টাকা ছাড় করতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই পুলিশের কাছে মামলার তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের বকেয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ফেরত দেওয়া হবে। এ কারণেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সব মামলার তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জানাতে পুলিশ সদর দপ্তরকে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান বলেন, মামলার তথ্যের ভিত্তিতে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই মধ্যে জাতীয় কারিগরি কমিটির বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোতে গ্রাহকদের প্রায় ২১৪ কোটি টাকা আটকে আছে।
ই-কমার্স খাতের গ্রাহকদের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক বলেন, ‘মাত্র পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো তারা গ্রাহকের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে আট থেকে ১০ দিন পর আমরা তাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য চেয়ে চিঠি দেব।’
এর আগে গ্রাহকের অর্থ ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা নগদ, সফটওয়্যার শপ লিমিটেড, সুর্যমূখী লিমিটেড, ফস্টার করপোরেশন লিমিটেড, বিকাশ লিমিটেড ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘গ্রাহকের তথ্য যাচাই সাপেক্ষে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। সেই নির্দেশনা অনুসারে কাজ চলছে। তবে এখনো কোনো গ্রাহকের হালনাগাদ তথ্য আমাদের কাছে নেই। গ্রাহকের অর্থ ছাড়ের প্রকৃত চিত্র আগামী সপ্তাহে জানা যাবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় তিন গোয়েন্দা সংস্থা প্রতারণায় জড়িত অভিযোগে ৩৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পৃথক তিনটি তালিকা জমা দেয় জাতীয় কারিগরি কমিটির কাছে। তালিকা পাওয়ার পর প্রতারণায় জড়িত এসব প্রতিষ্ঠানের কত টাকা কোথায় আছে, তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তথ্য চায় কমিটি। সেই আলোকে তারা কমিটিকে প্রতিবেদন দিয়েছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত ৩৩ প্রতিষ্ঠানের ৫০০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়ার তথ্য জানানো হয়। তবে কারিগরি কমিটি জানিয়েছে, জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এসক্রো সার্ভিসে ই-কমার্স গ্রাহকদের ২১৪ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে গ্রাহকদের এই অর্থ ছাড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।