মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’–এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শুধু তা–ই নয়, নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ব্লগ সাইট ‘গেটস নোটস’-এ প্রকাশও করেন তিনি। সম্প্রতি আফ্রিকার এক তরুণ নারী কৃষিবিজ্ঞানীর কথা ব্লগ সাইটটিতে প্রকাশ করেছেন বিল গেটস।
আমি স্বভাবতই আশাবাদী। যদিও মাঝে মাঝে আমার আশাবাদ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ভবিষ্যৎ খুব সুন্দর, এমনটা সব সময় বিশ্বাস করা সহজ নয়। আমি বছরের পর বছর ধরে এমন একটি কৌশলকে ভরসা করেছি, যা সব সময় আমাকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করে। আমার কৌশল হচ্ছে, অপরিচিত নায়কদের খোঁজ রাখা, যাঁরা মানুষের জীবনকে উন্নত করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্নভাবে আশ্চর্যজনক সব কাজ করছেন। আমি আমার হিরোস ইন দ্য ফিল্ড সিরিজে অনেকের সম্পর্কে লিখেছি। আমি নতুন একজনের সঙ্গে পরিচয় করাতে চাই। তাঁর নাম ডোরা শিমবামওয়া। ডোরা জাম্বিয়ার একজন উদ্ভিদ গবেষক। তিনি কৃষকদের উষ্ণ আবহাওয়ায় উন্নতি করতে সাহায্য করছেন নিজের দক্ষতা দিয়ে।
ডোরা সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনালের জাম্বিয়ান কার্যালয়ের একজন গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি মূলত কীটপতঙ্গ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর গবেষণার লক্ষ্য, টেকসই চাষাবাদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের ফলন ও আয় উন্নত করতে সহায়তা করা। নিজের কাজের ধরন তুলে ধরে ডোরা জানিয়েছেন, আমার কাজের মধ্যে রয়েছে ফসলের কীটপতঙ্গ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বিভিন্ন প্রযুক্তি গবেষণার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছি।
ডোরার মনে হয়, এ কাজটি করার জন্য তাঁর জন্ম হয়েছে। যদিও তা বুঝতে ডোরার কিছুটা সময় লেগেছিল। তিনি জাম্বিয়ার তুলা উন্নয়ন ট্রাস্টে বেড়ে উঠেছেন। দক্ষিণ জাম্বিয়ার এই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে তাঁর বাবা কাজ করতেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের ছোটবেলায় সামনে থেকে দেখেছেন ডোরা। ছোটবেলা থেকেই ডোরা কৃষিবিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত। যদিও অনেক শিশু তার বাবার কাজের প্রতি তেমন মনোযোগ দেয়নি।
কর্মজীবনে প্রবেশের সময় বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন ডোরা। তারপর ডোরা তাঁর কমিউনিটির ওপর প্রভাব রাখার চেষ্টা করেন। ডোরার ভাষ্যে, ‘আর সেই সময় থেকে আমি আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।’ ডোরা ফল আর্মিওয়ার্ম নামের একটি আক্রমণাত্মক কীটপতঙ্গের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন তখন। সাম্প্রতিক সময়ে এই কীট আফ্রিকাজুড়ে ভুট্টার ফসল ধ্বংস করেছে। এই কীটের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফল আর্মিওয়ার্ম গরম ও শুষ্ক পরিবেশে বৃদ্ধি পায়। আর এখন জাম্বিয়া তার ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সিনথেটিক কীটনাশক সমাধানের অংশ হলেও তা বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। এসব কীটনাশক ফসলের জন্য উপকারী অন্যান্য পোকামাকড়কে মেরে ফেলতে পারে। এ জন্য ডোরা বিকল্প পদ্ধতিতে কাজ করছেন। তিনি বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার করছেন। এই কীটনাশক বিশেষভাবে ফল আর্মিওয়ার্মকে লক্ষ্য করে কাজ করে।
বিষাক্ত প্রভাব তৈরি করে না। বৈজ্ঞানিক দক্ষতার বাইরে ডোরার কার্যক্রম বিষয়ে আমি মুগ্ধ। নিয়মিত গ্রামীণ কমিউনিটিতে প্রশিক্ষণ দেন ডোরা। বিভিন্ন ফিল্ড ট্রায়াল পরিচালনার জন্য ভ্রমণও করে নিজের গবেষণাকে বাস্তব-বিশ্বে প্রয়োগের চেষ্টা করে। কৃষকদের সময় দিতে ডোরা রাত তিনটার সময় ঘুম থেকে ওঠেন। এই অভ্যাস ডোরা অল্প বয়স থেকেই গড়ে তুলেছেন।
কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিচ্ছিন্নভাবে করা যায় না। ডোরাও গবেষণাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন। ডোরা কৃষি গবেষণায় আফ্রিকান নারীদের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্ক আফ্রিকান উইমেন ইন অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সমর্থিত। ডোরা বলেন, ‘কৃষিতে প্রধানত পুরুষ আধিপত্য দেখা যায়। যে কারণে কখনো কখনো আপনাকে গাইড করতে ও আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য একটি কণ্ঠের প্রয়োজন হয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।