আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্বকোণে মাতাফ (তাওয়াফের জায়গা) থেকে দেড় মিটার ওপরে লাগানো ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন ও বহু মূল্যবান বরকতময় বেহেশতের উপকরণ।
কাবাঘরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে প্রায় চার ফুট উঁচু দেয়ালের কিছুটা ভেতরে পুঁতিত কালো থালার মতো একটি গোল পাথরের নাম ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর।
পাথরটি প্রথমে সাদা ছিলো। বনি আদমের চুম্বন ও গুনাহ আকর্ষণ হেতু ক্রমে পাথরটি কালো হয়ে গেছে। বর্তমানে পাথরটির চারপাশে রূপার বৃত্ত লাগানো।
সৌভাগ্যবানরা এর ভেতরে মুখ কিংবা মাথা ঢুকিয়ে চুমো খেতে পারেন। অধিক ভিড়ের কারণে চুমো খেতে সমস্যা হলে তাওয়াফ শুরু ও তাওয়াফের চক্কর পূর্ণ হলে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত উঠিয়ে ইশারা করে হাতে চুমু খেতে হয়।
প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ পবিত্র হজ বা উমরা পালন করতে মক্কা শরিফ গমন করেন। ইসলামের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানের মধ্যে মক্কার অবস্থান সর্বপ্রথম। ইসলামের ৫টি মূল ভিত্তির অন্যতম হলো- হজ।
পবিত্র হজ পালনের জন্য মুসলমানদের মক্কায় আসতে হয়। যারা হজ বা উমরা পালনে মক্কা আসেন তাদের সবার ইচ্ছা থাকে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বন করার।
এই বিখ্যাত কালো পাথরটি হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম নিয়ে এসেছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কাছে। এই পাথরের সামনে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তারক্ষীরা অবস্থা করেন।
নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ তাওয়াফকারীদের এই পাথরের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন। অনেক সময়, লোকজনের ভিড় ও হুড়োহুড়ি বেশি হলে তাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেন। সারাক্ষণই পাহারায় নিয়োজিতদের তৎপর দেখা যায়।
তবে নামাজের সময় নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। নামাজের সময়ও তারা এখানে দায়িত্ব পালন করেন। ঠিক পাথরের কাছে কিছুটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। কাবা ঘরের দেওয়ালে লাগানো আংটা এক হাত ধরে নজর রাখেন চারপাশে। অনেক সময় তারা, বৃদ্ধ, ছোট কিংবা প্রতিবন্ধী তাওয়াফকারীকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে সহায়তাও করেন রীতি ভেঙে, মানবিক কারণে।
তবে একজন কিন্তু বেশিক্ষণ দায়িত্ব পালন করেন না। প্রতি ঘন্টায় হাজরে আসওয়াদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রক্ষীদের বদল করা হয়। যাতে করে তারা সুস্থ দেহে, সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এখানে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীর মূল কাজ হলো- কালো পাথরের দেখাশুনা করা আর দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান করা। এভাবে দিনরাত পালা করে চব্বিশজন নিরাপত্তাকর্মী এখানে দায়িত্ব পালন করেন।
হাজরে আসওয়াদ দেখাশুনার জন্য নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার আগে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা হয়। প্রথমত তারা এই কাজ করতে পারবে কিনা? তাদের শারীরিক সক্ষমতা। সর্বোপরি এখানকার তাপ ও মানুষের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা তার রয়েছে কিনা?
বেশিরভাগ মানুষ হাজরে আসওয়াদকে একটি পাথর মনে করলেও এটি আসলে ৮টি ছোট ছোট পাথরের সমষ্টি। সবগুলো পাথরকে একত্রে ঢালাই করে রাখা হয়েছে।
হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফকারীরা তাওয়াফ শুরু করেন। একবার কাবা প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফকারীরা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতে বা চুম্বন করতে চান। শুধুমাত্র ফরজ নামাজের সময়টুকু ছাড়া এখানে বেশি ভিড় লেগেই থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।