১৯৮২ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েই এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তাকে দেশ ছাড়তে চাপ দেওয়া হলেও তিনি দেশ ছাড়েননি। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে নানা অন্যায় ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে টানা সাত বছর বন্দিদশা কাটিয়েছেন। তবু খালেদা জিয়া আপস করেননি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শহীদ হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে খালেদা জিয়া অবস্থান করছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। সে সময় বিএনপি ছিল বিপর্যস্ত। দলের হাল কে ধরবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এর ছয় মাস পর, ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি, খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে তিনি প্রশংসা অর্জন করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। পরে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন তিনি।
দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। কোনো সমঝোতা না করেই দেশ ও জনগণের স্বার্থে এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যান। এতে এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি এরশাদ হটাও এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
বেগম জিয়া বর্তমানে সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিক্রান্ত করছেন: ডা. জাহিদ
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তার একটি অনন্য রেকর্ড হলো পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়ী হওয়া।
সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবগুলো মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন। তিনি বাড়িটিতে ২৮ বছর ছিলেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার বাড়িটি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আপসহীন নেত্রীতে পরিণত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া ওয়ান ইলেভেনের সময়ও গ্রেপ্তার হন। দেশ ছাড়ার জন্য চাপ থাকলেও তিনি দেশ ছাড়েননি। এরপর বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হন এবং জেলও খাটতে হয়েছে। কিন্তু তিনি আপস করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


