আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিরিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল আল মিকদাদ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তেহরান সফর করেন। সিরিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মোয়াল্লেম হঠাৎ ইন্তেকালের পর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ গত ২২ নভেম্বর ফয়সাল আল মিকদাদকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। খবর পার্সটুডে’র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফর বেশ কয়েক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়া সংকট বিষয়ে আস্তানা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা, সিরিয়া ও এ অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেয়া এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে কথাবার্তা বলা তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য।
ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের উদ্যোগে রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য ২০১৭ সালের জানুয়ারির পর কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান বেইকি বলেছেন, ‘পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন স্বেচ্ছাচারী নীতির কারণে সিরিয়া গভীর সংকটে পতিত হয়েছে এবং ওই অঞ্চল সন্ত্রাসীদের তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি এ অঞ্চলে স্থায়ী সংকট সৃষ্টি করার জন্য সিরিয়াকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের কারণে ওই ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হয়ে যায়।
যাইহোক, আস্তানা বৈঠকের পর যুদ্ধ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সিরিয়া বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং ওই দেশটির নতুন সংবিধান প্রণয়ের বিষয়ে আস্তানা বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিরিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় তেহরান সফরে এলেন যখন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী চক্র এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল পশ্চিম এশিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি এবং এ অঞ্চলের ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এমনকি দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সিরিয়ার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এ অবস্থায় এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইরান ও সিরিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থা ও পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে গত জুলাই মাসে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি দামেস্ক সফরে গিয়ে সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত সেনা প্রধান আলী আব্দুল্লাহ আইয়ুবের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করেন।
ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ হাদি সাইয়্যেদ আফকাহি ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই সমঝোতার আগে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা কেবল সামরিক উপদেষ্টা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। সিরিয়া সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ইরান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরামর্শ দেয়ার জন্য সামরিক উপদেষ্টাদেরকে সেখানে পাঠিয়েছিল। কিন্তু এখন এ সহযোগিতার মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে।
যাইহোক, যতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সৌদি আরব ও তাদের অন্যান্য মিত্ররা এ অঞ্চলকে নিরাপত্তাহীন করে তোলার চেষ্টা করবে ততদিন পর্যন্ত ইরান সিরিয়ার পাশে থাকবে। কারণ সন্ত্রাসবাদের হুমকি এ অঞ্চলসহ সারা বিশ্বকে গ্রাস করবে। এ কারণে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।