ছোটবেলায় চিড়িয়াখানায় গিয়ে আমরা অনেকেই হাতি দেখেছি। যাঁরা স্বচক্ষে দেখেননি, তাঁরা নিশ্চয়ই ছবি, ভিডিও বা চলচ্চিত্রে দেখেন। হাতির কথা বলতে গেলেই এর বিশাল দেহ, মূল্যবান গজদন্ত, শুঁড় এবং বড় দুটো কানের কথা আসে। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, এই কান দুটো শুধু বড় নয়, বিশাল বড়।
আমরা মানুষ, আমাদের কান অনেক ছোট। শরীর এবং কানের অনুপাত যদি ভাবি, শুধু মানুষ নয়, আমাদের আশপাশের বেশিরভাগ পরিচিত প্রাণীর কানই ওরকম ছোট। স্বাভাবিক। এর কাজ মূলত শোনা, তাই তো? মানুষের কান অবশ্য ভারসাম্য রক্ষাতেও সাহায্য করে। তবে, সেটা ওই ছোট কানেই হয়ে যায়। তাহলে, প্রশ্ন হলো, হাতির এই বিশাল দুটো কানের কাজ কী?
প্রকৃতিতে কিছুই আসলে অর্থহীন নয়। সব কিছুরই কোনো না কোনো কাজ আছে। তেমনি হাতির কানেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। শোনার পাশাপাশি এর মূল কাজ হলো দেহের তাপীয় ভারসাম্য রক্ষা করা। ইংরেজিতে বলে ‘থার্মোরেগুলেশন’। অর্থাৎ শরীর যে তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে, সেই তাপমাত্রাটা ধরে রাখা। হাতির কান ঠিক এই কাজটিই করে।
তবে অঞ্চলভেদে হাতির কানের আকার ছোট-বড় হয়। যেমন এশিয়ার দিকের হাতিগুলোর কান তুলনামূলক ছোট। আবার আফ্রিকার হাতিগুলোর কান সে তুলনায় অনেকটা বড়।
সাধারণত হাতি উষ্ণ পরিবেশে বাস করে। পরিবেশের এই তাপ শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে অনেক। তাই দেহের তরল ও কলাগুলোর তাপ বের করে দেওয়া প্রয়োজন। এই কাজটিই করে হাতির কান। ওদের কানের ত্বকের পৃষ্ঠের ঠিক নিচেই থাকে রক্তনালী। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে তাপ এসব রক্তনালীর মাধ্যমে রক্তের মধ্য দিয়ে কানে চলে আসে। হাতি যখন কান নাড়ায়, তখন পরিচলন প্রক্রিয়ায় এসব নালীর মধ্য দিয়ে তাপ বেরিয়ে যায়।
একটু আগেই যে বললাম, এশিয়ার হাতিগুলোর কান কিছুটা ছোট হয়, সেটার কারণ বোঝা যায় সহজেই। এশিয়ার তাপমাত্রা আফ্রিকার মতো অসহনীয় নয়, সবুজ অঞ্চলও বেশি। তাই এখানকার হাতিগুলোর তুলনামূলক কম তাপ ছাড়তে হয় পরিবেশে। সেজন্যই তাদের কান ছোট। আর আফ্রিকার তাপমাত্রা বেশি, সেজন্য ওদের কানও বড়। এর মধ্য দিয়ে ওরা তুলনামূলক বেশি তাপ ছেড়ে দিতে পারে, রক্ষা করতে পারে দেহের তাপীয় ভারসাম্য।
আর শুনতে তো কাজে লাগেই! প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের শব্দও শুনতে পারে হাতি। শুনতে পায় শব্দতর বা ইনফ্রাসোনিক, অর্থাৎ মানুষের শ্রবণসীমার চেয়ে কম কম্পাঙ্কের শব্দ। সেজন্য ঝড় এলে হাতি প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকেই শুনতে পায়!
সেই সঙ্গে নিচু একধরনের শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এরা। মানুষের কান এই শব্দ শুনতে পায় না। মানুষ ২০ থেকে ২০ হাজার হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। পুরুষ হাতি সাধারণত ১২ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ ব্যবহার করে, নারী হাতি ব্যবহার করে ১৩ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ।
আর বাচ্চা হাতি ২২ হার্জ কম্পাঙ্ক পর্যন্ত শব্দ করতে পারে। ২০ হার্জের কম কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পেলে হাতিকে আর গম্ভীর প্রাণী বলে মনে হতো না আমাদের। দেখা যেত, গরুর মতোই একটু পরপর শব্দ করছে হাতির দল। অল্প কম্পাঙ্কের এই শব্দকে বাংলায় বলে শব্দতর, ইংরেজিতে বলে ইনফ্রাসোনিক সাউন্ড। এসব শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি। তাই এই শব্দ অনেক দূরে, ৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
আরেকটা কাজ আছে এই কানের। নিজের কর্তৃত্ব জাহির করা। অন্য কোনো প্রাণীর কাছে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কান দুটো প্রসারিত করে দেয় হাতি। ওই বিশাল দুই কানের বিপুলদেহী এই প্রাণীকে দেখে তখন ভয় না পেয়ে উপায় থাকে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।