১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লোয়েল মানমন্দিরে কাজ করছিলেন মার্কিন জ্যোতির্বিদ ক্লাইড টমবাউ। পর্যবেক্ষণ সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এই তরুণ জ্যোতির্বিদ। ইউরেনাস ও নেপচুনের কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে হয়, কিছু একটা ঠিক নেই। গ্রহ দুটির মধ্যে তৃতীয় আরেকটি বস্তু থাকায় এগুলোর কক্ষপথে বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে বলে মনে হয় তাঁদের। তৃতীয় অজানা এই বস্তুর নাম দেওয়া হয় ‘প্লানেট এক্স’।
টমবাউ মূলত এই প্লানেট এক্সের সন্ধান করছিলেন। সে জন্যই তিনি চোখ মেলে রেখেছিলেন আকাশে। কিন্তু বিধি বাম। প্লানেট এক্সের বদলে তিনি খুঁজে পান ছোট্ট এক বস্তু। পরে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, যুক্তরাজ্যের রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে বস্তুটিকে গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এসেছে নতুন গ্রহ, সে জন্য নামও তো লাগবে। সাধারণত আবিষ্কারক ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা গ্রহের নাম রাখেন। আগের গ্রহগুলোর ক্ষেত্রে মোটাদাগে তা-ই হয়েছে, বলা যায়। এবারে কিন্তু ভিন্ন ব্যাপার হলো। লোয়েল মানমন্দির নামকরণের জন্য প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিল রীতিমতো। ১১ বছরের কিশোরী ভেনেশিয়া বার্নি থাকর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের রোমান দেবতার নামে গ্রহটির নাম রাখার কথা ভাবল সে। এ কথা সে তারা দাদাকে জানায়। তিনিই এ নাম জমা দেন সেই প্রতিযোগিতায়। তারপরেরটা ইতিহাস। সর্বসম্মতিক্রমে এর নাম রাখা হয় প্লুটো।
তারপর প্রায় ৭৬ বছর ধরে সৌরজগতের নবম গ্রহের মর্যাদা নিয়ে ভালোই ছিল ছোটখাটো প্লুটো। ১৯৭৮ সালে হিমশীতল প্লুটোর প্রথম প্রাকৃতিক উপগ্রহ শ্যারন আবিষ্কৃত হয়। পরে হাবল টেলিস্কোপের কল্যাণে আরও চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার হয় গ্রহটির। ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এই চারটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়।
সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু কপাল খারাপ প্লুটোর। গ্রহের ফেরে পড়ে গেল। ফলে বিপত্তি বাঁধল ২০০৬ সালে। না, বিপত্তিটা প্লুটোতে বাঁধেনি। ঝামেলাটা পাকিয়েছেন পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। সে বছর তাঁরা গ্রহের সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন আনেন। আসলে, পরিবর্তন আনাটা জরুরি ছিল।
কারণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের সামনে আরও ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হচ্ছিল মহাবিশ্ব। একের পর এক বিভিন্ন ধরনের মহাজাগতিক বস্তু আবিষ্কৃত হতে থাকে। এসব বস্তুকে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে সেগুলো নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই সূত্র ধরেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা গ্রহের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনেন। আর সেই পরিবর্তনের কারণেই সৌরজগতের কনিষ্ঠ গ্রহটি পড়ল বিপদে।
উল্টোপাল্টা আচরণ করলে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় অনেক সময়। কখনো কখনো অফিসে বস দু-চারটা বকাও দেন। অথচ বিজ্ঞানীরা বেচারা প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকেই বাদ দিয়ে দিলেন! কেড়ে নেওয়া হলো গ্রহত্বের মুকুট।
সবাই অবশ্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। পরিবারের ছোট গ্রহটির দুঃখে তাঁরা একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। পৃথিবীর প্রায় ৫০০ কোটি কিলোমিটার দূরের প্লুটোর গ্রহত্ব ফিরিয়ে দিতে দেশে দেশে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। বিজ্ঞানীদের অবশ্য তাতে মন গলেনি। প্লুটো গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। এখন এটিকে বলা হয় বামন গ্রহ। ইংরেজিতে বলে, ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।