জুমবাংলা ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউনাইটেড স্টেইটস অফ আমেরিকা- সংক্ষেপে ইউনাইটেড স্টেটস বা ইউ. এস.। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লাখ বর্গ-কিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৯০ লক্ষ। সামগ্রিক আয়তনের হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। আবার স্থলভূমির আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যমণ্ডিত বহুজাতিক সমাজব্যবস্থা। বহু দেশ থেকে বিভিন্ন জাতির মানুষের অভিবাসনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ একটি বহুসংস্কৃতিবাদী দেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতি। ২০০৮ সালে দেশের আনুমানিক জিডিপি হার ছিল ১৪.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আমেরিকার আদিম অধিবাসীরা সম্ভবত এশীয় বংশোদ্ভুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে এরা কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। তবে নেটিভ আমেরিকানদের জনসংখ্যা ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকে মহামারী ও যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপে ব্যাপক হ্রাস পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আটলান্টিক মহাসাগর তীরস্থ উত্তর আমেরিকার তেরোটি ব্রিটিশ উপনিবেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই এই উপনিবেশগুলো একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে।
এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে উপনিবেশগুলো তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ঘোষণা করে। সে সময় একটি সমবায় সংঘের প্রতিষ্ঠা করে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিদ্রোহী রাজ্যগুলো গ্রেট ব্রিটেনকে পরাস্ত করে। এই যুদ্ধ ছিল ঔপনিবেশিকতার ইতিহাসে প্রথম সফল ঔপনিবেশিক স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়া কনভেনশন বর্তমান মার্কিন সংবিধানটি গ্রহণ করে। পরের বছর এই সংবিধান সাক্ষরিত হলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার সহ একক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৭৯১ সালে সাক্ষরিত এবং দশটি সংবিধান সংশোধনী সংবলিত বিল অফ রাইটস একাধিক মৌলিক নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো ও রাশিয়ার থেকে জমি অধিগ্রহণ করে এবং টেক্সাস প্রজাতন্ত্র ও হাওয়াই প্রজাতন্ত্র অধিকার করে নেয়। ১৮৬০-এর দশকে রাজ্যসমূহের অধিকার ও দাসপ্রথার বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ দক্ষিণাঞ্চল ও শিল্পোন্নত উত্তরাঞ্চলের বিবাদ এক গৃহযুদ্ধের জন্ম দেয়।
উত্তরাঞ্চলের বিজয়ের ফলে দেশের চিরস্থায়ী বিভাজন রোধ করা সম্ভব হয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা আইনত রদ করা হয়। ১৮৭০-এর দশকেই মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা পায়। স্পেন-মার্কিন যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশ প্রথম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। ঠান্ডা যুদ্ধের শেষভাগে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের দুই-পঞ্চমাংশ খরচ করে এই দেশ। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিধর রাষ্ট্র। ১৯৩০ এর দশকে ও একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষে আমেরিকার অর্থনীতি ‘অর্থনেতিক মহামন্দা’ বা ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’র স্বীকার হয়।
উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত একান্ন রাজ্য ও একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা নিয়ে গঠিত এক যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্র নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আটচল্লিশটি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত; এই অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত যথাক্রমে কানাডা ও মেক্সিকো রাষ্ট্রদ্বয়। আলাস্কা রাজ্যটি অবস্থিত মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে; এই রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রয়েছে রাশিয়া। হাওয়াই রাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারভুক্ত।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।