জুমবাংলা ডেস্ক: প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটিতে কেল্টীয় বোইয়াই জাতি বাস করত। তাদের নাম থেকেই এই অঞ্চলের নাম বোহেমিয়ার উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। খ্রিস্টীয় ১ম থেকে ৫ম শতকের মধ্যে চেক জাতি কেল্টীয়দের এখান থেকে বিতাড়িত করে। প্রথমে অশ্বারোহী যাযাবর আভার্জ জাতি ও পরবর্তীকালে মোরাভীয়রা এটি দখলে নেয় এবং সাধু সিরিক ও সাধু মেথোডিয়াসের প্রচারণার ফলে একটি খ্রিস্টান দেশে পরিণত হয়।
তারপর ৯ম শতকে এটি রোমান সাম্রাজ্যের একটি ডিউক-শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। পরে বোহেমিয়ার প্রেমিস্ল বংশের ডিউকেরা মোরাভিয়া ও সাইলেসিয়ার অধিকাংশ দখল করেন এবং ১১৯৮ সালে রাজা ১ম অটোকার এই বংশের প্রথম উত্তরাধিকারমূলক রাজত্ব সূচনা করেন।
তার পৌত্র রাজা ২য় অটোকার যদিও বর্তমান অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির বহু নতুন এলাকা জয় করেছিলেন, সেগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৩০৬ সালে প্রেমিস্ল বংশের পতন ঘটে। এরপর লুক্সেমবুর্গের রাজা ৪র্থ চার্লস বোহেমিয়ার রাজা হন। তার শাসনকাল ছিল বোহেমিয়ার স্বর্ণযুগ। তিনি বোহেমিয়াতে মধ্য ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। এরপর তিনি বোহেমিয়ার প্রথম শাসক হিসেবে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হন।
১৫শ শতকে বোহেমিয়াতে শাসকবর্গের সাথে হুসাইটদের যুদ্ধের ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পড্ইয়াব্রাডির জর্জ অবশেষে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই ছিলেন বোহেমিয়ার শেষ স্থানীয় রাজা। এরপর বোহেমিয়া প্রথমে হাঙ্গেরির রাজাদের হাতে এবং তারপর ১৫২৬ সালে হাব্সবুর্গ রাজবংশের শাসনাধীনে আসে এবং ১৬১৮ সাল পর্যন্ত তাদের অধীনে থাকে। ১৬১৮ সালে সম্রাট মাথাউস ধর্মীয় স্বাধীনতা বাতিল করলে বোহেমিয়ার আইনসভা হাব্সবুর্গ বংশীয় রাজা (যিনি পরবর্তীতে সম্রাট ২য় ফের্ডিনান্ড হন) ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেই জায়গায় প্রোটেস্টান্ট ৫ম ফ্রেডেরিককে ক্ষমতায় বসায়। এর ফলে ৩০ বছরের যুদ্ধ শুরু হয় (১৬১৮-১৬৪৮)। শ্বেত পর্বতমালায় প্রোটেস্টান্টদের পরাজয় ঘটে এবং চেকরা তাদের স্বাধীনতা হারায়। বোহেমিয়াতে পুনরায় হাব্সবুর্গ আধিপত্য সৃষ্টি হয় এবং দেশটির প্রবলভাবে জার্মানীকরণ শুরু হয়। ১৮৪৮ সালে এক বিপ্লবে চেক জাতীয়তাবাদের উগ্র প্রকাশ ঘটে এবং পরের বছরের মধ্যেই তা দমন করা হয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ হিসেবে বোহেমিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৩৮ সালে বোহেমিয়া, মোরাভীয়া ও সাইলেসিয়ার সীমান্তের জার্মান-প্রধান সুডেটেন অঞ্চল নাৎসি জার্মানিকে মিউনিখ চুক্তি অনুসারে দিয়ে দেয়া হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানি বোহেমিয়া আক্রমণ করে এবং এটিকে দখলে আনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের পর এটি ১৯৩৮ সালের আগের সীমান্তে ফেরত যায় এবং বোহেমিয়ার জার্মান ভাষাভাষীদের বিতাড়িত করা হয়। বর্তমান বোহেমিয়ার প্রায় সব অধিবাসী চেক। ১৯৪৮ সালে বোহেমিয়া প্রদেশটি উঠিয়ে দিয়ে সেখানে প্রাগ শহর এলাকাসহ দশটি প্রশাসনিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়।
বোহেমিয়া চেক ভাষায় ‘চেখি` এবং জার্মান ভাষায় ব্যোমেন; পোলীয় ভাষায় মধ্য ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। এটি তিনটি ঐতিহাসিক চেক অঞ্চলের একটি এবং চেক প্রজাতন্ত্রের পশ্চিম দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। বৃহত্তর অর্থে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে, অনেক সময় বোহেমিয়া বলতে সমগ্র চেক দেশটিকেই বোঝায়, যাতে মোরাভিয়া ও চেক সাইলেসিয়া অঞ্চল দুইটি অন্তর্ভুক্ত।
বোহেমিয়ার আয়তন ৫২ হাজার ৭৫০ বর্গকিলোমিটার। এখানে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রায় ৬৩ লক্ষ লোক বাস করেন। বোহেমিয়ার উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে জার্মানি, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে পোল্যান্ড, পূর্বে ঐতিহাসিক চেক অঞ্চল মোরাভিয়া, এবং দক্ষিণে অস্ট্রিয়া। এটি জার্মানির বায়ার্ন বা বাভারিয়া রাজ্য হতে বোহেমীয় অরণ্য দ্বারা, জাখ্সেন বা স্যাক্সনী রাজ্য হতে এর্ট্সগাবির্গা পর্বতশ্রেণী দ্বারা এবং সাইলেসিয়া হতে সুডেটেন পর্বতমালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন।
বোহেমিয়া এল্বে ও ভ্লাতাভা নদী-বিধৌত উর্বর পাহাড়ী অঞ্চল। এখানে কাচশিল্প, বিভিন্ন খনন শিল্প (কয়লা, তামা, রূপা, সীসা, রেডিয়াম, ইউরেনিয়াম, ইত্যাদি) এবং বস্ত্রশিল্প আছে। ভারি শিল্পগুলো প্রাক্ বা প্রাহা শহর এলাকায় অবস্থিত।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।