নীলস হেনরিক ডেভিড বোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক হিসেবে বিখ্যাত। বোরের পারমাণবিক মডেল প্রথম পরমাণুর স্থিতিশীল মডেলের ধারণা দিয়েছিল মানুষকে। ১৯২২ সালে পরমাণুর গঠন ও পারমাণবিক বিকিরণ আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান এই বিজ্ঞানী। যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তান অউ নীলস বোরও নোবেল পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে, ১৯৭৫ সালে। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে যৌথ গতি ও কণার গতির মধ্যকার সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য বেন মোটেলসন এবং জেমস রেইনওয়াটারের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।
কুরি পরিবারকে বলা যায় খাঁটি গবেষক পরিবার। তার ওপর মেরি কুরি একমাত্র নারী, যিনি ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এবং ১৯১১ সালে রসায়নে—দুবার নোবেল পেয়েছেন। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য স্বামী-স্ত্রী পিয়ের কুরি, মেরি কুরি ও বিজ্ঞানী হেনরি বেকরেলকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ততদিনে দ্বিতীয় নোবেল পাওয়ার উপযুক্ত কাজ করে ফেলেছেন এই স্বামী-স্ত্রী। রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেন তাঁরা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯০৬ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান পিয়ের কুরি। ফলে ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য রসায়নে মেরি কুরি এককভাবে নোবেল পান। পরের প্রজন্মে বাজিমাত করেন এই দম্পতির মেয়ে ইরিন জুলিয়ো কুরি। তেজস্ক্রিয় পরমাণু কৃত্রিমভাবে বানানোর উপায় আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৫ সালে তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
এই পরিবার আবার এক কাঠি সরস। কারণ, এই পরিবারের বাবা-ছেলে নোবেল পেয়েছেন একসঙ্গে, একই বিষয়ে! এরকম ঘটনা ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। বাবা উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগ ও ছেলে উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ এক্স-রে ব্যবহার করে কেলাসের গঠন বিশ্লেষণে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে। সে সময় হেনরি ব্র্যাগের বয়স ছিল ৫৩ বছর, আর ছেলে লরেন্সের বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। নোবেল পাওয়ার জন্য লরেন্সের বয়স কি অনেক কম বলে মনে হচ্ছে? আসলে পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে কম বয়সে নোবেলপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীও তিনিই।
আর্থার কর্নবার্গ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৫৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে। ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য তাঁকে সেভেরো ওচোয়ার সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁর ছেলে রজার ডেভিড কর্নবার্গ নোবেল পুরস্কার পান রসায়নে ২০০৬ সালে ইউক্যারিওটিক সেল বা সুকেন্দ্রিক কোষে যে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া হয়, তার জৈবভিত্তি নিয়ে গবেষণার জন্য।
হ্যান্স ভন ইউলার-শেলপিন নোবেল পেয়েছিলেন ১৯২৯ সালে রসায়নে। অ্যালকোহলের গাঁজন প্রক্রিয়ায় অবদানের জন্য তাঁকে আর্থার হার্ডেনের সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। উলফ ভন ইউলারের বাবা হ্যান্স যেমন নোবেলজয়ী রসায়নবিদ, তেমনি মা অস্ট্রিড ক্লিভ ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদ। উলফ নিজের কাজের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন শারীরতত্ত্ব ও ওষুধবিজ্ঞান—বলা চলে, বাবা-মা দুজনের কাজের মিলন ঘটেছে তাঁর কর্মে।
১৯৪৬ সালে নোরাপিনেফ্রিন নামের একটি হরমোনকে তিনি স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার বা উদ্দীপনাবাহক হিসেবে শনাক্ত ও আলাদা করার ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে এ কাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
কার্ল ম্যান সিয়েবন ১৯২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান এক্স-রে বর্ণালিবিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য। বাবার যোগ্য উত্তরসূরী ছেলে কাই ম্যান সিয়েবন উচ্চরেজুল্যুশনের ইলেকট্রন বর্ণালি প্রক্রিয়ার একজন পথিকৃৎ। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে।
ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জে জে থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কারক হিসেবে বেশি পরিচিত। কিন্তু তিনি ১৯০৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান গ্যাসের তড়িৎ পরিবাহিতা আবিষ্কারের জন্য। বাবা যতটা পরিচিত, ছেলে জর্জ প্যাজে থমসন ততটা পরিচিত নন অনেকের কাছেই। কেলাসের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের অপবর্তনের পরীক্ষামূলক প্রমাণের জন্য তাঁকে ১৯৩৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ক্লিনটন ডেভিসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।