টেলিস্কোপে চোখ রাখলে বামন গ্যালাক্সি দেখা যাবে যা আন্তঃগ্যালাকটিক ফাঁকা জুড়ে সবখানেই রয়েছে। এর কোনোটি ছুটছে, কোনোটি বিস্ফোরিত হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে তাদের ভেতরের মাল-মশলা—নাড়িভুঁড়ি। এই মাল-মশলা দিয়ে গড়ে উঠবে নক্ষত্র, জন্ম নেবে গ্রহ-গ্রহাণু-ধূমকেতুরা।
এদের বামন গ্যালাক্সি বলা আসলে অন্যায়। কারণ, বামন গ্যালাক্সিরাই আসলে দলে ভারী। প্রতি দশটা বামন গ্যালাক্সির বিপরীতে মহাবিশ্বে কেবল বড় বা স্বাভাবিক আকারের একটা গ্যালাক্সি পাওয়া যাবে। তবু, আমরা তো আসলে নিজেদের গ্যালাক্সির সঙ্গে তুলনা করেই বলতে পছন্দ করি। খেয়াল করে দেখুন, এই লেখার শুরুটিও কিন্তু পৃথিবী, তথা মিল্কিওয়ে থেকে!
সাধারণ গ্যালাক্সিতে শত শত বিলিয়ন নক্ষত্র থাকে। বামন গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র থাকে মাত্র মিলিয়নখানেকের মতো। ১ মিলিয়ন মানে ১০ লাখ, আর বিলিয়ন মানে ১০০ কোটি। বামন গ্যালাক্সিদের যে অনুজ্জ্বল, ম্লান দেখাবে তাতে আর আশ্চর্য কী! এ জন্য এদের শনাক্ত করাও খুব কঠিন।
মূলত তিনটা বৈশিষ্ট্যের কারণে বামন গ্যালাক্সিদের সহজে শনাক্ত করা যায় না। এক, এরা খুব ছোট। দূর মহাকাশে তাকালে বিশাল ও উজ্জ্বল সব সর্পিল গ্যালাক্সি যখন আপনার মনোযোগ কেড়ে নেবে, অমন ক্ষুদ্র কিছু তখন চোখে পড়বে কেমন করে? দুই, এদের উজ্জ্বলতা খুব কম।
এ জন্য যেসব জরিপ করার সময় নির্দিষ্ট একটা উজ্জ্বলতার নিচের কোনো কিছু খোঁজা হয়নি, ওসব জরিপে এগুলো একেবারে বাদ পড়ে গেছে। আর যেগুলোতে অমন সীমানা ছিল না, অমন অনেকগুলোতেও এরা কম উজ্জ্বলতার জন্য রয়ে গেছে আড়ালে। তিন, এদের মাঝে যেসব নক্ষত্র আছে, এদের ঘনত্ব খুবই কম। কাজেই রাতের আকাশে পৃথিবীর চারপাশের আরও যেসব আলোর উৎস আছে, সেই হিসেবে এদের আলোর উজ্জ্বলতা আলাদা করে চোখে পড়ে না।
মিল্কিওয়ের চারপাশের ২০টি বামন গ্যালাক্সির দুটি বিখ্যাত। বিখ্যাত নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলানের নামে এগুলোর নাম রাখা হয়েছে ম্যাগেলানের মেঘ। এরা মিল্কিওয়েকে ঘিরে ঘোরে উপগ্রহের মতো। কম্পিউটার সিমুলেশনে দেখা যায়, এক সময় মিল্কিওয়ের আকর্ষণে এই দুর্ভাগা বামনদের বেশির ভাগ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। মিল্কিওয়ে তাদের গিলে নেবে পেটের ভেতর। স্যাজিটারিয়ার ডোয়ার্ফ নামে এরকম একটা বামন গ্যালাক্সিব্যবস্থাকে এই সেদিন, গত ১ বিলিয়ন বছরের মধ্যেই ‘কোৎ’ করে গিলে ফেলেছে মিল্কিওয়ে।
কিন্তু এসব বামন গ্যালাক্সির জন্ম হয় কীভাবে? গ্যালাক্সি-ক্লাস্টার, মানে গ্যালাক্সিপুঞ্জের মধ্যকার উচ্চ ঘনত্বের অঞ্চলগুলোতে একাধিক গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ হয় মাঝেমধ্যে। এই সংঘর্ষে খুলে যায় গ্যালাক্সির পাকানো দেহ। সর্পিল আকৃতির বাহু খুলে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনেক নক্ষত্র। সংঘর্ষ হয় এদের মধ্যকার গ্যাসীর মেঘের মধ্যে।
বিস্ফোরণের ফলে যে অঞ্চলে নক্ষত্রেরা জন্ম নেয়, ওসব অঞ্চল থেকে শত শত মিলিয়ন নক্ষত্র গ্যালাক্সির মহাকর্ষের বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে চলে আসে, ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এসব নক্ষত্রের কয়েকটা মিলে আবার এক হয়ে জোট পাকাতে থাকে। এগুলোই একসঙ্গে হয়ে গড়ে ওঠে বামন গ্যালাক্সি। ছড়িয়ে পড়া অন্য নক্ষত্রগুলো ভেসে চলে মহাশূন্যের মাঝে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।