জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুরে বাড়িতে হামলার মাধ্যমে মূলত তার “প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে” বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। হামলাকারীদের সাথে পিস্তল-বন্দুক-রামদার মতো অস্ত্র ছিল বলেও বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন তিনি।
হামলার জন্য রংপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন জি এম কাদের।
বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে নয়টার দিকে মি. কাদেরের রংপুরের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসে ঘোষণা দিয়েই এই হামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই রাজনীতিবিদ। এই ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের দাবি, আগে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে, একইদিন বিকেলের দিকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জি এম কাদের। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণসহ নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন তিনি।
তার এই বক্তব্য প্রচারের পর “ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে” তারা নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
পুলিশ বলছে, মিছিলটি জিএম কাদেরের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে সেখানে অবস্থান করা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে জিএম কাদেরের বাসার জানালার কাচ ভেঙে যায়। পরে বাসার সামনে থাকা দুইটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান।
এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি তবে “আইনগত বিচারের প্রক্রিয়া চলছে” বলে জানিয়েছেন তিনি।
যেভাবে ঘটনার শুরু
বৃহস্পতিবার রংপুরে নিজ বাড়িতে বসেই সরকারের নানা বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
এসময় তিনি দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং নির্বাচনের ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানান।
একইসাথে তরুণদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টাদের ‘পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের’ কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ও ওনার সঙ্গে যারা তরুণ, তাদের উনি উনার নিয়োগকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন। তারা মিলে দেশকে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত করেছেন। এই বিভক্তি দিনকে দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং একজনের ওপর আরেকজনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।”
“সামনের দিকে বড় ধরনের একটি সংঘাত পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি,” বলেন তিনি।
এছাড়াও দলীয় কার্যক্রমে বাধা দেয়া হচ্ছে দাবি করে মি. কাদের বলেন, “আমাদের মিছিল করতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। কাউন্সিল করতে যাব, সেখানে হল ভাড়া নিতে পারি না। অযথা মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করা হচ্ছে এবং বিচার ছাড়াই তাদের মাসের পর কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে।”
এই বক্তব্য দেওয়ার পরই রংপুরে জিএম কাদেরের অবস্থানের কথা জানতে পারেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি।
তখনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার ব্যানারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে তিনি জানান।
মি. কাদেরের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সন্ধ্যার পরে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করেন তারা।
“আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে”
হামলার সময় জি এম কাদের বাড়ির ভেতরেই ছিলেন জানিয়ে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এক কর্মীর মেয়ের বিয়েতে অংশ নিতে রংপুরে যান তিনি। ঈদের আগে কয়েকদিন সেখানে থাকার পরিকল্পনাও ছিল তার।
তবে তার আসার কথা জানতে পেরে কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা। এসময় পার্টি অফিসে হামলা হতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেন।
কিন্তু সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই “৫০/৬০টা লোক হই হই করে বাসার মধ্যে ঢিল মারা শুরু করে” বলে জানান মি. কাদের। এসময় হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং আরও দুটো মোটরসাইকেল নষ্ট করে দেয়।
“হামলাকারীদের সাথে পিস্তল-বন্দুক-রামদা ছিল” এবং তারা তাকে “মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই” হামলা করেছিল বলে দাবি করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির সদস্যরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই হামলা করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে “আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুরে অবস্থান করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি” ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি।
রাত ৯টা ১৯ মিনিটে দেয়া আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, জাতীয় পার্টি ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা চালিয়েছে। একই পোস্টে “রংপুরের জনগণ এবং সকল রাজনৈতিক দলকে” টাউন হলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিবিসি বাংলাকে মি. ইমতি জানিয়েছেন, চার রাস্তার মোড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পর প্রশাসনের কাছে নিজেদের দাবি জানানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
কিন্তু অবস্থান নেয়ার জন্য চার রাস্তার মোড়ের কাছাকাছি গেলে জাতীয় পার্টির “অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী লোক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে এবং ককটেলজাতীয় কিছু ফাটানো হয়” বলে দাবি করেন তিনি।
“এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়”। এসময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হাতে “দেশীয় অস্ত্র” থাকার দাবিও করেন মি. ইমতি।
তবে হামলার সময় পার্টির অন্যরা পার্টি অফিসে ছিলেন বলে জানান জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগরের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ওরা তো মিছিল নিয়ে গিয়ে ওখানে অ্যাটাক করেছে”।
এর আগে হামলার পরপরই একে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ দাবি করে মি. মোস্তফা জানান, “মিছিলে থাকা ব্যক্তিরা ককটেল ফুটিয়েছে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে”।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি বলছেন, তাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে “আশেপাশের গাছের ডাল ভেঙে তারা লাঠি বানিয়েছিল”।
তবে আগুন কে লাগিয়েছে এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান মি. ইমতি। হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারজন আহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
“আওয়ামী লীগের দোসরকে এক্সকিউজ হিসেবে ব্যবহার করছে”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ টার্মটিকে হামলার “এক্সকিউজ” হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন জি এম কাদের।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এটাতো কোনো কারণ হতে পারে না। আমার তো নির্বাচন করার অধিকার আছে”।
আর যারা তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছেন “উনারাও আওয়ামী লীগে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সদস্যই ছিলেন” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বড় ধরনের সংঘর্ষের শঙ্কা থেকে হামলার ঘটনায় নেতাকর্মীদের কোনো প্রতিবাদ করতে দেননি বলে দাবি করেন মি. কাদের। আরও কিছুদিন বাড়িতে থাকার পরিকল্পনা থাকলেও হামলার পর আজই ঢাকায় ফিরছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া হামলার ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানান তিনি। মি. কাদের বলেন, “আমার বাসায় যেহেতু অ্যাটাক হয়েছে এবং আমার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে, এটা তো স্বাভাবিক একটা মামলা। এটাতো রাজনৈতিক কোনো মামলা নয়।”
অবস্থা প্রেক্ষিত বিবেচনা করে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপির কিছুও কর্মীকেও সেখানে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের দলের বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ সেখানে ছিল না। এলাকাবাসী দুয়েকজন কেউ থাকতে পারে। কিন্তু সেটা আমাদের বিষয় না।”
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে সেখানে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের নেতাকর্মীরা ছিল। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।-বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।