নানা ছুতানাতায় বসুন্ধরা কিংসের স্বপ্ন বারবার ধাক্কা খাচ্ছে এএফসি কাপের চৌকাঠে। কোনোভাবেই এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটা খেলা হচ্ছে না বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের!
গতকাল বিমানবন্দরে যাওয়ার সব আয়োজন সেরেও রওনা করতে পারেনি তারা। দুপুর দেড়টা নাগাদ ক্লাব হাউস থেকে খেলোয়াড়রা গাড়িতে উঠবেন, এমন সময়ই এএফসি দেয় খেলা স্থগিতের দুঃসংবাদটা। কিংস সভাপতি ইমরুল হাসানের জন্য খবরটা খুবই হতাশার, ‘এই খবর আগের দিন এলেও এক রকম হতো। সকালেও এএফসির সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা মালদ্বীপ রওনা হতে বলেছে। কিন্তু দুপুরে খেলোয়াড়রা যখন গাড়িতে উঠবে এমন সময় খেলা স্থগিতের খবর শুনলাম। ফুটবলারদের জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আমাদের দলের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
দুই মাস ধরে এই টুর্নামেন্টমুখী হয়ে ছিল বসুন্ধরা কিংস। মাঠের খেলা এবং মানসিক প্রস্তুতি কোনো কিছুতেই এতটুকু ঘাটতি ছিল না তাদের। ঠিক যেভাবে চেয়েছিল, ফেভারিট দল হয়েই তারা মালদ্বীপে পৌঁছাবে। যাত্রাপথে বাধা পড়ায় কিংসের ডিফেন্ডার তপু বর্মনেরও মন খারাপ, ‘আমাদের দলের জন্য এটা খুবই হতাশার খবর। আমাদের এত ভালো প্রস্তুতি ছিল, বিরতির পর ফিরতি লেগে তিনটি ম্যাচে দল চমৎকার খেলেছে। এএফসি কাপে আমাদের ভালো করার সুযোগ ছিল। কিছুই হলো না শেষ পর্যন্ত। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমাদের এ রকম ঘটনা মেনে নিতে হবে।’
সকালে রওনা হওয়ার কথা বললেও দুপুরে এএফসি দিয়েছে মালদ্বীপে এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপের খেলা স্থগিতের দুঃসংবাদ। ১৪ মে থেকে মালেতে এই গ্রুপের চার দলের খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগে ১১ মে হওয়ার কথা ছিল বেঙ্গালুরু এফসি ও ঈগলসের ম্যাচ, বিজয়ী দলই খেলত গ্রুপে চতুর্থ দল হিসেবে। বেঙ্গালুরুর ফুটবল দলটিই সর্বশেষ ভজঘট পাকিয়েছে। তারা গত শুক্রবার মালদ্বীপে পৌঁছেছে এবং কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কভিড প্রটোকল ভাঙার অভিযোগ ওঠে। খেলোয়াড়দের যখন হোটেল রুমে থাকার কড়া নির্দেশনা তখন বেঙ্গালুরুর কয়েকজন বিদেশি ফুটবলারকে দেখা গেছে মালের রাস্তায় ঘুরতে। এটাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে মালদ্বীপের ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ টুইট করেন, ‘তাদের এই কর্মকাণ্ড মানা যায় না। অনতিবিলম্বে এই দলকে মালদ্বীপ ছাড়তে হবে।’ এই খবর শুনে বেঙ্গালুরু এফসির মালিক পার্থ জিন্দালও ক্ষমা চেয়ে টুইট করেছেন, ‘আমার দলের তিন বিদেশি ও স্টাফের এমন ব্যবহারে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কারণে এএফসি কাপের মর্যাদাহানি হয়েছে। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, এ রকম আর কখনো হবে না।’ বেঙ্গালুরু এফসির ফুটবলারদের এমন আচরণ ও মালদ্বীপে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ায় শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায় মালদ্বীপে এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপের খেলা।
কিন্তু এই টুর্নামেন্ট শেষ মুহূর্তে স্থগিত করায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এটিকে মোহনবাগান ও বসুন্ধরা কিংসের বিমান টিকিট এবং হোটেল বুকিং বাবদ অনেক টাকা জলে গেছে। খেলা স্থগিত হওয়ার হতাশার পাশাপাশি বড় আর্থিক ক্ষতি দেখছেন বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান, ‘খেলা না হয়ে আমাদের বিমান ভাড়া, হোটেল বুকিংয়ে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এএফসির আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পর আমরা ক্ষতিপূরণের চিঠি পাঠাব তাদের কাছে। আশা করি, আমাদের ক্ষতির দিকটা এএফসি বুঝবে।’ গতবারও তারা অনেক আয়োজন করে একটি ম্যাচের বেশি খেলতে পারেনি। ঢাকায় টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে দুর্দান্ত সূচনার পর করোনায় বাতিল হয়ে গিয়েছিল এএফসি কাপ। এবার প্রথম দফায় খেলা স্থগিত হওয়ায় এক দফা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু সামনে যে আরো বড় ক্ষতির শঙ্কায়ও আছে তারা। স্থগিত হওয়া খেলা কখন হবে, তার ঠিক নেই। সেটা আগস্টে হলে দেখা যাবে বিদেশি ফুটবলারদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। চুক্তি শেষ হলে তাদের সঙ্গে করতে হবে নতুন চুক্তি, বিদেশির সঙ্গে চুক্তি কখনো এক টুর্নামেন্টের জন্য হয় না। তখন করতে হবে পুরো মৌসুমের জন্য।
এত ক্ষতির পরও বসুন্ধরা কিংস হাল ছাড়ছে না। যেকোনো মূল্যে তারা জুটি বাঁধতে চায় এএফসি কাপের সঙ্গে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।