উৎক্ষেপণের সময়, অর্থাৎ শুরুতেই প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি পোড়ানো হয় মাত্র কয়েক মিনিটে। যেমন স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় ১১২ টন পরিশোধিত কেরোসিন পোড়ায়। ফলে বায়ুমণ্ডলে যোগ হয় ৩৩৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড। ডিলেজচালিত একটি গাড়ি বছরে প্রায় ৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে।
সেদিক থেকে ফ্যালকন ৯ রকেট একবার উড্ডয়নের সময় ৭০টি গাড়ির সমপরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ে। শুধু তা-ই নয়, রকেট ইঞ্জিন থেকে নির্গত হয় ক্লোরিন, কালি বা ছাই ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের কণা। এসবও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু রকেট যখন ওপরে ওঠে, তখন ধোঁয়া ও নির্গত কণার কারণে ওজোন স্তর তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ত্রিপরমাণুক অক্সিজেন অণু, অর্থাৎ ওজোনসমৃদ্ধ এ স্তর সূর্যের মারাত্মক রশ্মির বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে। ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্থ হলে এর প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক জলবায়ুতে।
বর্তমান মহাকাশযানগুলোর বেশির ভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর। তবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারও হচ্ছে। যেমন জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন কোম্পানীর নিউ শেপার্ড রকেটে ব্যবহৃত হচ্ছে তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন জ্বালানি। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে তৈরি এ জ্বালানি সরাসরি পরিবেশের ক্ষতি করে না। ধোঁয়ার পরিবর্তে রকেট থেকে নির্গত হয় জলীয় বাষ্পের স্রোত। ওজোন স্তর স্বাভাবিক থাকে। সমস্যাটা হয় পানি থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়ায়। সে ক্ষেত্রে আবারও পোড়ানো হয় জীবাশ্ম জ্বালানী। ফলে পরিবেশের ক্ষতি এ সময়ও হয় পরোক্ষভাবে।
এ ছাড়া রকেটের সব অংশ এখনও বারবার ব্যবহার করা যায় না। বুস্টার, ফুয়েল ট্যাংকসহ বেশ কিছু অংশ ফেলে আসতে হয় পৃথিবীর কক্ষপথে। সেগুলো মহাকাশ আবর্জনা হিসেবে পৃথিবীর বাইরের পরিবেশকে দূষিত করছে।
সার্বিকভাবে রকেট উৎক্ষেপণের হার কম। তাই সামগ্রিক জলবায়ুতে এর বড় একটা প্রভাব পড়ে না। তবে প্রতিবছর বাড়ছে রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যা। ২০২২ সালে ১৮৬টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশযাত্রা শুরু হলে সংখ্যাটা ১০০০-এ পৌঁছাতে পারেন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য পরিবেশের ক্ষতি কমানোর উপায় নিয়ে ভাবছেন শুরু থেকেই। সেই সঙ্গে চেষ্টা করছেন পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির। এ কাজে ইতিমধ্যেই সফলতা এসেছে। ফ্যালকন ৯ রকেটটির বেশির ভাগ উপাদানই ১০০ বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তবে রকেটযাত্রা পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব করতে এখনও আরও সময়ের প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।