গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর মিষ্টি পানের গুণগত মান ভালো হওয়ায় রপ্তানি হতো ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। দুই বছর আগে হঠাৎ পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার পানচাষিরা। অনেকে বরজ ভেঙে অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
পানচাষিরা জানান, প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানের উৎপাদন খরচ। রপ্তানি বন্ধ থাকার ফলে লাভের চেয়ে উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
পটুয়াখালী জেলা সদর, বাউফল, দশমিনা, রাঙ্গাবালী ও দুমকী এলাকায় সারি সারি পানের বরজ। দুই বছর আগে লাভ বেশি হওয়ায় স্থানীয় চাষিরা পান চাষে আগ্রহী ছিল। তবে রপ্তানি বন্ধ ও লাভ কম হওয়ায় পানের আবাদ আর বাড়ছে না।
ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পানের বরজ নির্মাণ করা যায়। আর বৈশাখে পান বিক্রি শুরু হয়। পৌষ মাস পর্যন্ত পান সংগ্রহ চলে। একটি সুস্থ গাছ থেকে ১০০-১৫০টি পর্যন্ত পান পাওয়া যায়। চাষিরা বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে রাস্তায় ও বাড়ির সামনে বসে পানের গাদি সাজান। এরপর টমটম যোগে পৌঁছে যায় স্থানীয় বাজার ও ঢাকাগামী ডাবল ডেকার লঞ্চে। ট্রাকযোগেও ঢাকা ও যশোর পৌঁছে যায় পান।
পানচাষি সুমা রানী জানান, একটি সুস্থ গাছ থেকে ১০০-১৫০টি পর্যন্ত পান পাওয়া যায়। প্রকারভেদে প্রতি চল্লি পান ৫০-৬০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। দুই চল্লিতে এক বিরা, ছয় চল্লিতে এক মুডি, ২৪ চল্লিতে এক পাই আর ১৬ পাইতে এক গাদি। পাইকারি বাজারে প্রতি পাই ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, আগে বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর পান বিদেশে পাঠাতে পারছি না। দাম না থাকার কারণে মাঝে মধ্যে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। সরকারিভাবে তাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরও লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।
আরেক পান চাষি সুদেব মিস্ত্রি জানান, পূর্ব পুরুষের আমল থেকে তারা পানের চাষ করে আসছেন। পান চাষ খুবই লাভজনক ছিল। গত কয়েক বছর ধরে পান রপ্তানি বন্ধ থাকায় পানের বাজার দর অনেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, পটুয়াখালীর মিষ্টি পানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল সৌদি আরব, দুবাই, ইতালি ও আমেরিকায়। সেসব দেশে বসবাসরত বাঙালিরা এ পান বেশি পছন্দ করে। রপ্তানি চালু থাকলে দামও ভালো পাওয়া যায়।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম জানান, একটা সময় এখানককার পানের স্বর্ণযুগ ছিল। রপ্তানি হতো বিভিন্ন দেশে। সেটি আপাতত হচ্ছে না। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন কম। তবে সমস্যা সমাধানে সরকার চেষ্টা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশে পান রপ্তানি শুরু হবে।
চলতি বছর জেলায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে মষ্টি পানের আবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।