দেশে আলুর বাম্পার ফলনেও খুশি হতে পারছেন না কৃষক। মৌসুমের শুরুর দিকে চড়া বাজার চড়া থাকলেও দাম পান না চাষিরা। এজন্য প্রচুর উৎপাদন সত্ত্বেও বরাবরই তাদের কাঁদতে হয়। তবে সে দুঃখও ঘুচতে পারে, বিদেশে চাহিদা বাড়ছে এ সবজির। ইতোমধ্যে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি হয়েছে চারগুণের বেশি। এতে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা দ্রুত ঘুরতে পারে বলে ধারণা করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। আমার দেশের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ৬২ হাজার ১৩৫ টন আলু রপ্তানি হয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ৩০০ টন আলু রপ্তানি হয়েছিল। সে হিসাবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিদেশ গেছে পাঁচগুণেরও বেশি।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ থেকে বেশি আলু রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। এছাড়া সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে যাচ্ছে এ সবজি। তবে এবার নেপালে আলু রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে নেপালে এ নাগাদ ১০৫ টন আলু রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, চলতি মৌসুম শেষে রপ্তানির পরিমাণ ৭০ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি আলুর কদর বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, উদ্বৃত্ত আলু বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি খুবই ইতিবাচক দিক। আগে আমাদের বিপুল পরিমাণ আলু আমদানি করতে হতো, এখন আমরা রপ্তানি করছি। সম্ভাবনাময় পণ্যটির বিষয়ে সবাই ইতিবাচক মনোভাব দেখালে আলু রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের কৃষকদের ভাগ্যবদলে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এখনো বিভিন্ন হিমাগারে ৩০ লাখ টন আলু মজুত আছে। মাসে সাত লাখ টন প্রয়োজন। তাতে আমাদের কাছে চার মাসের আলু আছে, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তো আগাম জাতের নতুন আলুবাজার আসবে, ফলে আমাদের দেশে আমদানি একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কেননা টানা বর্ষণের কারণে সবজির উৎপাদন কমে আলুর ওপর চাপ পড়বে, তাতে দামও বাড়বে। এছাড়া সম্প্রতি কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথসভায় আলুর দাম ও কৃষকের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ওএমএস (খোলাবাজারে বিক্রি) কার্যক্রম এবং টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পাঁচ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ বেশি। এতে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে।
রপ্তানিকারক তাওহীদুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশে আলুর দাম কম ও মান ভালো হওয়ায় বিদেশে আলু রপ্তানি বেড়েছে।
এছাড়া রপ্তানিকারকদের মতে, প্যাকেজিং ও স্বাস্থ্যবিধি মানদণ্ডের সমস্যার কারণে কম্বোডিয়া, হংকং ও ফিলিপাইনের বাজারে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তগুলো ইতিবাচক হলে এ পণ্যটি রপ্তানির ক্ষেত্রে আরো সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হর্টেক্স এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রফিকুল আমিন বলেন, বিদেশে আলু রপ্তানি বৃদ্ধি খুবই ইতিবাচক দিক, এতে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। এরপরও চাষির প্রচুর লোকসান হচ্ছে। কৃষকদের লোকসান কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভাবছে।
এদিকে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্য অনুযায়ী, এবার এক কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ৪০ লাখ টন বেশি। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতার কারণে হিমাগার ফটকে এলাকাভেদে কেজি এখন ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অথচ সব মিলিয়ে কৃষকের প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫ টাকা। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষক যদি পণ্যের দাম না পায় পরবর্তী সময়ে তারা এটি উৎপাদনের আগ্রহ হারাবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়কে পৃথক চিঠিতে আলুর দাম ২০-৩০টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের চেয়ে এ বছর ১০ লাখ টন বেশি আলুর অন্তত পাঁচ লাখ টন ওএমএস ও টিসিবির ট্রাকসেলের মাধ্যমে সমন্বয় করার অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথসভায় আলোচনা হয়েছে। ওএমএস (খোলাবাজারে বিক্রি) কার্যক্রম এবং টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করবে সরকার।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও হাসেন কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী হাসেন আলী বলেন, আলুর ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকরা উৎপাদন কমিয়ে দেবেন, সে ক্ষেত্রে সংকটে পড়বে দেশ। তাই ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও নজর দিতে হবে।
সম্প্রতি সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কৃষকরা আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আমরা চেষ্টা করছি কৃষক যেন আলুর দাম পায়। তাই ওএমএসের মাধ্যমে আলু সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।