বিজনেস ডেস্ক : বাজার বৈচিত্র্যে এখনও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, তাছাড়া আরও কয়েকটি কারণে রফতানি খাতে বারবার হোঁছট খায় বাংলাদেশ। কিন্তু বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতি বছর বাণিজ্য সহায়তা পায় বাংলাদেশ। নগদ অর্থ না হলেও প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, কারিগরি সহায়তা বাবদ শীর্ষ গ্রহীতাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।
চলতি মাসে ‘এইড ফর ট্রেড ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক: প্রমোটিং ইকোনমিক ডাইভারসিফিকেশন অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। প্রতিবেদনে বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাণিজ্য সহায়তার গ্রহীতা দেশগুলোর পাশাপাশি দেশগুলোর রফতানি পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যের পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়।
প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রফতানি খাত এখনো বৈচিত্র্যহীন। রফতানি পণ্যে কিছুটা বৈচিত্র্য এলেও আসেনি রফতানি বাজারে।
প্রতিবেদনে বাণিজ্য সহায়তাপ্রাপ্ত দেশগুলোর চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত শীর্ষ বাণিজ্য সহায়তাপ্রাপ্ত দেশগুলোর ছক দেয়া হয়। দেখা গেছে, আলোচ্য ১২ বছরে প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য সহায়তার পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ পরিমাণ সহায়তা নিয়ে ছকে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। প্রথম অবস্থানে থাকা ভারতে বাণিজ্য সহায়তার পরিমাণ বার্ষিক ২১৬ কোটি ডলার। ভিয়েতনামে ১৯০ কোটি, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৯ কোটি ও পাকিস্তানে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন ইনডেক্স বা রফতানি বৈচিত্র্যের সূচকও উপস্থাপন করা হয়েছে। সূচকে পণ্য ও বাজার দুই ক্ষেত্রেই বিশ্বের বিভিন্ন রফতানিকারকের পরিস্থিতি উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ১৯৯৫ থেকে ২০০০ এই ছয় বছরের তুলনায় ২০১৩ থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে পণ্য বৈচিত্র্য বেশি ছিল। অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বাংলাদেশের রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য কিছুটা হলেও হয়েছে। যদিও বাজার বৈচিত্র্যে ২০১৩ থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরের তুলনায় ১৯৯৫ থেকে ২০০০ এই ছয় বছরে বেশি ছিল। অর্থাৎ বাজার বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ পিছিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য এইড ফর ট্রেড (এএফটি) বা বাণিজ্য সহায়তা দেয়া হয়। এ সহায়তা সরাসরি কোনো রফতানিকারক পায় না। সহায়তার বেশির ভাগই কারিগরি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা উন্নয়ন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনকে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে এ ধরনের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেই বাণিজ্য সহায়তাগুলো পাওয়া যায়, যা কোনো নগদ অর্থের প্রণোদনা নয়।
বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে, মার্কেট অ্যাকসেস বাড়াবে এ বিষয়গুলোই এইড ফর ট্রেডের মূল লক্ষ্য। এগুলোর মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ হয়, আন্তর্জাতিক পরামর্শকরা দেশে আসেন। সহায়তা হিসেবেই এগুলো পায় বাংলাদেশসহ বেশকিছু দেশ। কিন্তু এ সহায়তাপ্রাপ্তির ফলাফল ভালো বলতে পারবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলাফল হিসেবে আমরা যেগুলো দেখতে চাই বা আমাদের প্রত্যাশা আছে এমন ক্ষেত্রগুলোর প্রধান হলো বাণিজ্য।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হাসান বলেন, সম্প্রতি ভিয়েতনাম ইইউর সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করেছে, নিকট ভবিষ্যতে আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হবে। কিন্তু এ বিষয়গুলো মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো মূল্যায়ন হয়নি। ইইউতে যদি ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি না থাকে তাহলে আমাদের কী করণীয়, ব্রেক্সিটের ফলে বাংলাদেশে প্রভাব কেমন হবে, মূল্যায়নের মাধ্যমে এসব বিষয় উঠে আসতে পারত। বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পরিকল্পনাটাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাণিজ্য সক্ষমতা উন্নয়ন, যা এইড ফর ট্রেডের মাধ্যমে হবে বলেই প্রত্যাশা করা হয়। বাণিজ্য সহায়তার মাধ্যমে রফতানি খাত বৈচিত্র্যময় করার বিষয়টি পরে আসে, কিন্তু তার আগেই বৈশ্বিক বাজারে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু এ ধরনের বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।