জুমবাংলা ডেস্ক : নিজস্ব জায়গা নয়, স্থায়ী বসবার ব্যবস্থা নয়, রোদ বৃষ্টিতে ছেড়াফাটা ছাতাই একমাত্র সম্বল ফুটপাতে বসে জুতা-সেন্ডেল সেলাইকারী রবিদাস মুচি সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর। অভাব অনটন আর দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত এই সম্প্রদায়। খেয়ে না খেয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।
পাবনা শহরতলীর যুগীপাড়া-মাঠপাড়ায় এলাকায় বসতি এমনই ৪০টি রবিদাস মুচি সম্প্রদায় পরিবারের। বসতি জায়গা সংকুলান হলেও ঠাসাঠাসি করেই চলছে তাদের জীবন ও জীবিকা। অর্থাভাবে ঝড়ে পড়ছে এই পরিবারগুলোর শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা। বঞ্চিত হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার ও সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে। সামাজিকভাবেও তারা অনেকটা অবহেলিত।
এই রবিদাস মুচি সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন পাবনার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সিংগা মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আলহাজ মোহাম্মদ আবুল হোসেন গত শুক্রবার যুগীপাড়া-মাঠপাড়া রবিদাস মুচি সম্প্রদায়ের বসতিতে পরিদর্শনে যান। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। এই ৪০ পরিবারের ২০ জন শিক্ষার্থী স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করছে। বাকিরা অর্থাভাবে ও দারিদ্রতার কষাঘাতে নিমজ্জিত।
রবিদাস সম্প্রদায়ের রতি রানী দাস, সৃষ্টি রানী দাস, রিতি রানী দাস, অঞ্জলী রানী, প্রতীমা রানী, ফাল্গুনী রানী, ইষান দাস, অপূর্ব কুমার, অনন্ত কুমার দাস, অপূর্ন দাস, অপূর্ণা রানী, পল্লবী রানী, অলোক কুমার দাস, স্রাবণ কুমার, বিবেক রবি দাস জানান, ‘আমরা সমাজের অবহেলিত মানুষদের মধ্যে পড়ি। অথচ আমাদের শিল্পকর্ম দিয়েই পায়ের জুতা, সেন্ডেল ও হাতের ব্যাগ মেরামত করা হয়। সরকার যায় সরকার আসে। অথচ সরকারি নানা সেবা ও অনুদান থেকে বরাবরই আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি। শুনেছি আমাদের নামে সরকারি বরাদ্দ হয়। অথচ সে বরাদ্দ আমাদের দ্বার অবধি আসে না।’
তারা বলেন, ‘অন্ধদের নিয়ে কাজ করে মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। নানা মানুষের দানকৃত অর্থে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলেও এই প্রতিষ্ঠান আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। বাচ্চাদের পড়ালেখা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের সাধ্যমতো আমাদের অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। সাধুবাদ জানাই এমন সহায়তার জন্য।’
সিংগা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর আলহাজ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, অসহায়, দরিদ্র, গরীব, অনাথ, এতিম, বয়স্ক, অসুস্থসহ নানা শ্রেণির অসহায় মানুষের পাশে সহায়তা করা হয়। শুধু পাবনা নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই প্রতিষ্ঠানে আবাসিকভাবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি, আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সার্বিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আলহাজ অধ্যাপক (অব.) মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘জীবনটা একদম ক্ষণিকের। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যতটুকু ভালো কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, মানব কল্যাণ ট্রাস্ট সেই ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সম্পদ, অর্থবিত্ত কবরে যাবে না। যাবে ভালো কাজের সফলতা।’
তিনি বলেন, ‘ভালো কাজে ভালো মানুষের সহায়তা দরকার। যারা পারবেন আমার ট্রাস্টের ভালো কাজের জন্য সহায়তা করবেন। যেন সমাজের অবহেলিত, অনাদরে বেড়ে উঠা মানুষগুলোর জন্য কিছু করা যায়। রবিদাস পরিবারগুলো পরিদর্শন করে তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য, পরীক্ষার ফিস ও ফরম পূরণের জন্য নগদ অর্থ ও মাসিকভাবে তাদের খরচ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।