জুমবাংলা ডেস্ক: রসগোল্লা তৈরির কথা ভাবলে দুধ-ছানার পরই মাথায় আসে চিনির কথা। এবার রেলিস বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারি মিষ্টির জগতে কাঁচা মরিচের ঝাঁজে সবুজ রঙের রসগোল্লা তৈরি ও বাজারজাত করে মিষ্টিপ্রেমীদের মধ্যে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। ইত্তেফাকের প্রতিনিধি মো. লুত্ফুর রহমান-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যারা কম মিষ্টির রসগোল্লা খেতে পছন্দ করেন, তারা এই মরিচ রসগোল্লার প্রধান ক্রেতা। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দেড় মাস আগে ১৫ কেজি দিয়ে শুরু করলেও চাহিদা বেড়ে এখন ৩০০ কেজি ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ রসগোল্লার চেয়ে কাঁচা মরিচের রসগোল্লার দামও একটু বেশি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে রেলিসের সাতটি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শাখায় গিয়ে নতুন স্বাদের এ রসগোল্লা ক্রেতাদের আগ্রহ ভরে কিনে নিতে দেখা গেছে। এদিকে কাঁচা মরিচের রসগোল্লার বিষয়টি গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, রসগোল্লার ছানার সঙ্গে কাঁচা মরিচ মিশিয়ে চিনির শিরায় ডুবানো হয় এবং তৈরি করা হয় সবুজ রঙের রসগোল্লা। নতুন রকমের এ রসগোল্লা মুখে দিলে প্রথমে মিষ্টি, তারপর ধীরে ধীরে জিহ্বায় ঝাল স্বাদ পাওয়া যায়। নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় রেলিসের শাখায় গিয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব বয়সের নূরে আলম নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রসগোল্লা খেতে বেশ পছন্দ করি। কাঁচা মরিচের রসগোল্লার কথা শুনে কিনতে এসেছি। বাজারে ভালো মানের সাধারণ রসগোল্লার দাম ২৬০ টাকা। নতুন স্বাদের কাঁচা মরিচের রসগোল্লার দাম একটু বেশি, ৩০০ টাকায় এক কেজি কিনেছি। একটি খেয়েছি। প্রথমে মিষ্টি, পরে আস্তে আস্তে ঝাল লেগেছে। তবে কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা জানি না। পরিবারের সদস্যদের কাছে ভালো লাগলে আরো নেব।’
কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায় রয়েছে রেলিসের প্রধান ও বড় দোকান। এখানে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ মালিকের (ভাই) একজন মো. সামছুল ইসলাম খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নগরীর কান্দিরপাড়, রামঘাট, রাজগঞ্জ, চকবাজার, কুচাইতলী (কুমেক হাসপাতালের সামনে) ও পদুয়ার বাজার এলাকায় তাদের মোট সাতটি শাখা রয়েছে। তাদের কনফেকশনারি পণ্য ও মিষ্টি তৈরির মূল কারখানা আদর্শ সদর উপজেলার বাখরাবাদ এলাকায়। গত দেড় মাস আগে তারা কাঁচা মরিচের রসগোল্লা পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে ১৫ কেজি তৈরি করেন। ঝাল ফ্লেভারের নতুন ধরনের সবুজ রঙের মিষ্টি হওয়ায় দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়ছে। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে এখন প্রতিদিন ৩০০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টির দোকানিরা পাইকারি কিনে নিতে আসেন, কিন্তু এখনই অন্য দোকানিদের কাছে বিক্রি করছি না।’
কথা হয় এমন মিষ্টি তৈরির কারিগর সজিব আহমেদের (২৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে এখানে কাজ করি। এর আগে গাজর, মসলা, হিমসাগর আমের রসে রসগোল্লা তৈরি করেছি। তবে এগুলো গ্রাহকদের তেমনভাবে আকৃষ্ট করেনি। এখন মিষ্টির জগতে আরো নতুন কিছু করার উদ্দেশ্যে এবং ক্রেতাদের ব্যতিক্রম কিছু খাওয়ানোর আগ্রহ থেকে কাঁচা মরিচের রসগোল্লা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঝাল স্বাদের নতুন ধরনের এ রসগোল্লা কুমিল্লায় এই প্রথম।’ তিনি আরো বলেন, ‘কাঁচা মরিচের ঝালে ভিন্নতা আছে। তাই মিষ্টির ছানার সঙ্গে রসগোল্লার প্রতি কেজিতে ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত কাঁচা মরিচের রস ব্যবহূত হচ্ছে, তাই রসগোল্লা সবুজ রঙের দেখা যায়। এক কেজিতে সবুজ রঙের ঝাল রসগোল্লা পাওয়া যায় ১৪টি। প্রতি কেজির সঙ্গে সমপরিমাণ শিরা দেওয়া হয়। এ রসগোল্লার চাহিদা বাড়ছে, এতে বেশ ভালো লাগছে।’
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, ‘কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। রসগোল্লার সঙ্গে কাঁচা মরিচ ব্যবহৃত হলে রঙ সবুজ হবে—এটা স্বাভাবিক। তবে অন্য কোনো রঙ বা রাসায়নিক ফ্লেভারের মিশ্রণ হলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। এ ধরনের রসগোল্লা বাজারজাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।