চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গবেষণায়। কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইনের জন্য এই পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার। আর প্রোটিনের গঠন অনুমানের জন্য বাকি অর্ধেকটা পেয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হ্যাসাবিস ও মার্কিন বিজ্ঞানী জন এম জাম্পার। রসায়নে নোবেল দেওয়া হলেও গবেষণাটি যে জীববিজ্ঞানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তা বলা বাহুল্য।
কারণটা একটু খোলাসা করা যাক। যেকোনো প্রোটিন সাধারণত ২০ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডের নানা ধরনের বিন্যাসের ফলে গঠিত হয়। অর্থাৎ এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলোকে বলা যায় প্রাণের মূল ভিত্তি বা গাঠনিক একক। অ্যামিনো অ্যাসিড মিলে মিলে প্রোটিন গঠন করে, আর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে জৈবনিক সব রাসায়নিক বিক্রিয়া। আর এবারের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরা এই প্রোটিনই হ্যাক করেছেন!
নোবেল জয়ী দুই বিজ্ঞানী ডেমিস হ্যাসাবিস ও জন এম জাম্পার নোবেল পেয়েছেন মূলত আলফাফোল্ড২ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই প্রোটিনের গঠন অনুমানের কাজটি করে। গুগল ডিপমাইন্ডের এই দুই বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এ বছরের মে মাসে চলে এসেছে আলফাফোল্ড২-এর উত্তরসূরী—আলফাফোল্ড৩।
ড্রাগ আবিষ্কার, প্রোটিন বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন কাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে দাঁতের চিকিৎসায় পর্যন্ত কাজে লাগছে। তবে আলফাফোল্ড২ ও ৩-ই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। কোয়ান্টা ম্যাগাজিন লিখেছে, খুব কম সপ্তাহই পেরিয়েছে যখন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। কাজেই চলতি বছরের আলোচিত কাজের তালিকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ঠাঁই না দিলে যে অন্যায় হবে, সে তো বুঝতেই পারছেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপির মাধ্যমে জন্মগতভাবে বধির এক শিশু শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের ১৮ মাস বয়সী ওপাল স্যান্ডি নামের এক মেয়ে শিশুকে এই থেরাপি দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত স্যান্ডিই সবচেয়ে কম বয়সী শিশু, যাকে এ থেরাপি দেওয়া হয়েছে। শিশুটি ‘অডিটরি নিউরোপ্যাথি’ নামে একটি রোগে ভুগছিল। এ রোগের কারণে ভুক্তভুগীরা শব্দ শনাক্ত করতে পারে ঠিকই, কিন্তু মস্তিষ্কে তা রিলে হয় না।
মানে মস্তিষ্ক সেই শব্দ শনাক্ত করতে বা বুঝতে পারে না। এ কারণে শিশু জন্মের সময় থেকেই বধির থাকে। ১৬ মিনিটের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির কানে কার্যকরী জিন স্থাপন করা সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের পর থেকে শব্দের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে শিশুটি। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে।
দৃষ্টিশক্তির নানারকম সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। এরকমই একটি সমস্যা অস্পষ্ট দেখা বা ব্লারি ভিশন। চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ কর্নিয়া প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমনটা হতে পারে। তিনজন মানুষের এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে স্টেম কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত দ্য ল্যানসেট জার্নালে।
এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে জাপানে। এর মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবার স্টেম কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সমাধান হলো দৃষ্টিশক্তি সমস্যার। এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেন মোট চারজন। তাঁদের প্রত্যেকের চোখের কর্নিয়ায় লিম্বাল স্টেম সেল ডেফিশিয়েন্সি বা এলএসসিডি নামের একটি সমস্যা ছিল। এ সমস্যা হলে কর্নিয়ার স্টেম কোষগুলো আর নতুন কোষ তৈরি করতে পারে না। এদিকে কর্নিয়ার কিছু কোষ মারা যেতে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।