জুমবাংলা ডেস্ক: ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, মরুভূমির বুকে রহস্যময় এক গুহার সন্ধান পেয়েছেন। তা নিয়ে কৌতূহলীদের অজস্র মন্তব্যও ধেয়ে এসেছিল। তার মধ্যে ছিল একটি সতর্কবাণীও- ওখানে আর ফিরে যেয়ো না। গুহার প্রবেশপথ খুঁজে পেলেও ভেতরে ঢুকতে যেয়ো না, আর বাইরে বেরোতে পারবে না! তা সত্ত্বেও ঐ গুহার পথেই পা বাড়িয়েছিলেন আমেরিকার নেভাদার বাসিন্দা কেনি ভিচ। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। গায়েব হয়ে যায় রহস্যময় সেই এম কেভও।
নেভাদার মরুশহরে এম অক্ষরের একটি গুহার সন্ধান পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন কেনি। তাকেই এম কেভ নামে ডাকতেন তিনি। সেটি ছিল ২০১৪ সালের শেষ ভাগ। হেঁটে হেঁটে নানা অজানা পাহাড়পর্বত, ভূতুড়ে শহর খোঁজাই ছিল তার কাছে নেশার মতো। রোমাঞ্চসন্ধানী কেনির দাবি ছিল, একা একাই সে সব দেখতে ঘরের বাইরে পা রাখতেন। তাতে বহু বিপদের মুখোমুখি হলেও ঠিক ঘরে ফিরে এসেছিলেন। তবে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর মোহাভি মরুভূমিতে তৃতীয় বারের জন্য এম কেভ দেখতে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি।
কেনির দাবি ছিল, প্রথম বার ঐ গুহার সামনে দাঁড়াতেই তার শরীরে তীব্র কাঁপুনি শুরু হয়েছিল। গুহার প্রবেশপথের সামনে যতই এগোন, সেই কাঁপুনি তীব্রতর হতে থাকে। কেন এমন হচ্ছে? তার রহস্যভেদ করতে পারেননি কেনি। ঘরে ফিরে ইউটিউবে ঐ গুহার একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তার পরেই আরো আশ্চর্যজনক ঘটনা। ‘এম কেভ’ খুঁজে পাওয়ার কথা ঐ ভিডিওর সঙ্গে মন্তব্যে জানিয়েছিলেন কেনি।
গর্ব করে লিখেছিলেন, এটা তো কিছুই নয়। আমি বহু দীর্ঘ পথে হাইকিং করেছি। নেলিসের (আমেরিকার) বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হাইকিং করার সময় একটা গুহার সন্ধান পেয়েছি। এর প্রবেশপথটি একেবারে এম অক্ষরের মতো। রহস্যময় গুহার সামনে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সে কথাও লিখেছিলেন কেনি। তিনি লিখেছিলেন, যখনই কোনো গুহা খুঁজে পেয়েছি, সব সময় তার ভেতরে ঢুকেছি। এর ভেতরেও ঢুকতে গিয়েছিলাম। তবে তার প্রবেশপথের সামনে দাঁড়াতেই আমার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। গুহার যত কাছে গিয়েছি, কাঁপুনি বাড়ছিল। ভয় পেয়ে গেলাম। এরপর সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসি। ঐ গুহার সামনে জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল।
ইউটিউবে কেনি ঐ ভিডিওটির নাম দিয়েছিলেন, ‘সন অফ অ্যান এরিয়া ৫১ টেকনিশিয়ান’। সাধারণের কাছে ‘এরিয়া ৫১’ নিয়ে বেশ কৌতূহল রয়েছে। নেভাদার ঐ অঞ্চল ঘিরে কম লোকগাথাও ছড়িয়ে নেই। সেখানে নাকি গোপন পরীক্ষানিরীক্ষা চালায় আমেরিকার বায়ুসেনা। ঐ এলাকায় নাকি ভিন্গ্রহীদের যান দেখা যায়। ‘এরিয়া ৫১’ হলো এডওয়ার্ডস বায়ুসেনা ঘাঁটি। সরকারি ভাবে একে হোমি এয়ারপোর্টও বলা হয়। তবে এই ঘাঁটি সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য কোনো দিনই প্রকাশ্যে আনেনি আমেরিকা। শুধু জানিয়েছে, এটি বায়ুসেনার মহড়ার জায়গা। এখানে বিভিন্ন যুদ্ধবিমান এবং অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা বা তার মহড়াও হয় বলে দাবি।
‘এরিয়া ৫১’ এলাকায় ‘এম কেভ’ ভিডিও পোস্ট করতেই তা সমাজমাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে ইউটিউবে ‘এম কেভ’-এর কোনো ছবি দেখা যায়নি। ঐ ভিডিওটি দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে আবার কেনির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছিলেন। কেউ আবার তাকে উৎসাহ দিতে শুরু করেছিলেন। ‘এম কেভের’ ছবি কোথায় গেল? ভিডিও থেকে কীভাবে গায়েব হলো তা? ধন্দে পড়ে যান কেনি। ঐ সময় থেকেই ‘এম কেভ’ নিয়ে নানা জল্পনা, গল্পগাথার জন্ম নিতে শুরু করেছিল। রহস্যের সমাধান করতে এক সময় ঐ গুহায় ঢোকার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেন কেনি।
দ্বিতীয় বার গুহার কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন কেনি। ব্যাগে ঢুকিয়ে নেন একটি ৯ মিলিমিটারের হ্যান্ডগান আর তার ভিডিও ক্যামেরাটি। এ বারও ঐ গুহার সামনে থেকে সেটির ভিডিও করে ঘরে ফিরে আসেন। ঘরে ফিরে ‘এম কেভের’ ভিডিওটি ইউটিউবে পোস্ট করেছিলেন কেনি। কী আশ্চর্য! আবার একই কাণ্ড! তার দাবিকে নিশ্চিহ্ন করে সেই গুহাটি ভিডিও থেকে গায়েব।! এ বার কেনির ভিডিও ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নানা বিরূপ মন্তব্যের মধ্যে কেনি দেখতে পান ঐ সতর্কবার্তাও। গুহার প্রবেশপথ খুঁজে পেলেও তাতে ঢুকতে নিষেধ করেছেন এক জন। কিন্তু কেন? তা খোলসা করেননি ঐ ‘শুভানুধ্যায়ী’।
অজানায় যে ভয় পাওয়ার বান্দা তিনি নন, তা বহু বার সমাজমাধ্যমে দাবি করেছেন কেনি। এক বার সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি একাই হাইকিং করি। বেশির ভাগ লোকজন যেখানে যেতে ভয় পায়, সে সব পাহাড়ের চুড়োয় উঠেছি। এতো অগুনতি গুহার ভেতরে ঢুকেছি যে তার সংখ্যা বলতে পারব না। র্যাটল স্নেকের সঙ্গে খেলা করেছি। তবে এই গুহার মতো কোনো কিছু দেখিনি।’ আর এক বার কেনি লিখেছিলেন,‘২০ বছর ধরে এ জীবনই যাপন করেছি। পর্বতশৃঙ্গের শীর্ষে উঠে তারাদের মাঝে সেখানে ঘুমিয়েছি। সব আকারের মাথার খুলি দেখেছি। মাঝেমধ্যে পশুদের ফাঁদও নজরে এসেছে। এক কাপ পানিতে ২০ মাইল পর্যন্ত হেঁটেছি। এক বার তো আমাকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করতে হয়েছিল। তবে সব সময়ই ঘরে ফিরে এসেছি।’
নিজেকে অকুতোভয় প্রমাণ করার জন্য বিপজ্জনক অভিযানের প্রসঙ্গে টেনে এনেছিলেন কেনি। তবে আপাতনিরীহ একটি গুহায় ভেতরে কী এমন ছিল, যার জন্য তৃতীয় বারের অভিযানে গিয়ে আর ঘরে ফেরেননি কেনি?‘এম কেভের’ ভেতরে ঢোকার জন্য ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ঘর ছেড়েছিলেন কেনি। পরিবারকে জানিয়েছিলেন, এক রাতের জন্য ছোট একটি সফরে যাচ্ছেন। তবে কে জানত, সেটিই ছিল তার শেষযাত্রা? নেভাদার মরুভূমি থেকে কেনি আর ফিরে আসেননি। ৩০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল তন্নতন্ন করে খুঁজেও কেনির দেহ পায়নি। তবে ২২ নভেম্বর তার মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি খাদানের মুখের সামনে থেকে।
কোথায় গায়েব হলেন কেনি? তার সেই গুহাটিই বা কোথায় রয়েছে? এর জবাব আজও মেলেনি। উদ্ধারকারী দলের কম্যান্ডার ডেভ কামিংস জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোন পাওয়ার পর ঐ খাদেও খোঁজ চালানো হয়েছিল। তবে কেনি যে খাদে নেমেছিলেন, তার কোনো চিহ্ন ছিল না। ধীরে ধীরে কেনির সন্ধান করাও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন পর একটি ইউটিউব ভিডিও নিজেকে কেনির বান্ধবী দাবি করেন এক তরুণী। তিনি আরো দাবি করেন, কেনি নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করেছেন। সে জন্যই তার মোবাইল ফোন ফেলে দেন, যাতে কেউ তার সন্ধান না পান। নিখোঁজ হওয়ার বছরখানেক আগে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন কেনি। এমনকি, তিনি অবসাদে ভুগছিলেন বলেও দাবি করেন ঐ তরুণী।
কেনির তথাকথিত বান্ধবীর দাবি ঘিরে শোরগোল হলেও এই রহস্যের সমাধান হয়নি। বরং এ নিয়ে নানা চক্রান্তের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। কারও দাবি, কেনি খাদে পড়ে গিয়ে মারা যান। কেউ বলেছিলেন, ‘এরিয়া ৫১’ এলাকায় কোনো গুপ্তপথের সন্ধান পেয়েছিলেন কেনি। এমনকি, অনেকের দাবি, কোনো গোপন সামরিক ঘটনা জেনে গিয়েছিলেন তিনি। কারও আবার দাবি, ভিন্গ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগের পর গায়েব হয়ে যান কেনি।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।