সিঙ্গাপুর থেকে শহীদ বিপ্লবী শরীফ ওসমান হাদির লাশ গতকাল শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছায়। এ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে ঢাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তাবলয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় বাড়ানো হয় চেকপোস্ট, টহল ও নজরদারি।
গতকাল সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে শহীদ হাদির লাশ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৫৮৫ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) কাউছার মাহমুদ জানান, বিমানবন্দরের আট নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে হাদির লাশ বের করা হয়। ফ্লাইট অবতরণের আগেই বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শহীদ হাদির লাশ আসার আগে থেকেই সেখানে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। বিমানবন্দরের টার্মিনাল, প্রবেশপথ ও আশপাশের সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে শুরু করে বাইরে বের হওয়ার প্রধান ফটক পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টে সশস্ত্র পাহারা জোরদার করা হয়। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক সড়কগুলোয় বসানো হয় অস্থায়ী চেকপোস্ট। যাত্রী ও সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা থাকলেও সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং যানবাহনের ওপর ছিল কঠোর নজরদারি। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁজোয়া যান ও এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) মোতায়েন করে শক্তিশালী সুরক্ষা জাল তৈরি করা হয়। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয় বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
শোকজের পর পদত্যাগ করলেন যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদশোকজের পর পদত্যাগ করলেন যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ড্রোন ব্যবহার করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সাধারণ মানুষ ও শোকাহত জনতাকে শান্ত থাকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় বিশেষায়িত ইউনিটগুলোও স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে শহীদ হাদির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজধানীহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার শোকাহত ছাত্র-জনতা। পরে হাদির লাশ দেশে ফেরার খবরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে শোক প্রকাশ ও কর্মসূচির ঘোষণা দেখা যায়। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগাম সতর্ক অবস্থান নেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, নগরের প্রবেশপথগুলোসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। ডিএমপির নিয়মিত টহল দলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হয়। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) রাজধানীর কৌশলগত পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেয় এবং মোবাইল টহল বাড়ায়। বিমানবন্দর থেকে লাশ বহনের সম্ভাব্য রুটগুলোয় র্যাবের বিশেষ নজরদারি লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক শক্তি হিসেবে মাঠে অবস্থান করছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শাহজালাল বিমানবন্দর, কারওয়ান বাজার ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ রাজধানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় বিপুলসংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবির বিশেষ স্ট্রাইকিং ফোর্সগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়।
হাদির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চায় জাতিসংঘহাদির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চায় জাতিসংঘ
এদিকে দেশে আসার পর শহীদ ওসমান হাদির লাশ শেরেবাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে।
ডিএমপির মুখপাত্র ও উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
নাশকতার ঝুঁকি বা সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো জানান, শোকাহত মানুষের আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়েই নিরাপত্তার এই ছক সাজানো হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয়।
ডিএমপি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। ডিবি পুলিশের সাদা পোশাকধারী সদস্যরা জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোয় বেড়েছে তাদের কার্যক্রম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্ভাব্য উত্তেজনা বা ভুল তথ্যের প্রচার পর্যবেক্ষণে বিশেষ টিম কাজ করছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে চলমান গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন কার্যক্রম দ্রুত শনাক্ত করতেই গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মতে, এই ধরনের উচ্চস্তরের সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুটি প্রধান উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। প্রথমত, শোকার্ত জনতার স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, অপশক্তি যেন এই সংবেদনশীল মুহূর্তকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে পথ বন্ধ করা। নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভা থেকে নির্দেশনা মোতাবেক এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য উত্তেজনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে আগেভাগেই সেখানে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নগরবাসীকে প্রয়োজন ছাড়া সম্ভাব্য সংবেদনশীল এলাকায় ভিড় এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, গণমাধ্যমে কোনো ধরনের উত্তেজনাকর বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য শেয়ার না করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।
সূত্রঃ আমার দেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



