জুমবাংলা ডেস্ক : লোডশেডিং বাড়ছেই। গভীর রাতেও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। প্রায় সারা দেশে লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ গ্রাহকরা। রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় গতকাল এক থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। তবে ১২ ঘণ্টার সম্ভাব্য লোডশেডিং ধরা হয় শুধু শ্যামপুরের কয়েকটি স্থানে। ডিপিডিসি’র দেয়া সম্ভাব্য সূচিতে দেখা যায় ওই এলাকায় প্রতি এক ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেখানো হয়। ওই এলাকার বাসিন্দারাও এমন তথ্য জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় গত ১৮ই জুলাই। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯শে জুলাই থেকে দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হয়। ডিপিডিসি’র কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন শ্যামপুর শিল্প কারখানা বন্ধ থাকে।
তাই সোম ও মঙ্গলবার এই এলাকায় বিদ্যুতের বরাদ্দ কমে যায়। এতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করার সূচি দেয়া হয়। বাকি পাঁচদিন এত বেশি থাকে না। চলতি অক্টোবর থেকে লোডশেডিং কমবে বলে জানিয়েছিল সরকার, কিন্তু তা হয়নি। বরং লোডশেডিং আরও বেড়েছে। চলতি মাসে গরম বেড়েছে।
সঙ্গে রয়েছে লোডশেডিং। এই দুই মিলিয়ে রাজধানীবাসীর অবস্থা নাকাল। দেশের অন্যত্রও পরিস্থিতি নাজুক। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়। এখন তা বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে এখন। কোথাও কোথাও দিনে পাঁচবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডেসকো’র এমডি আমির কাউসার আলী। গতকাল ডিপিডিসির আওতাধীন বেশির ভাগ এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়। তালিকায় এমনটাই দেখা গেছে। তবে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিষ্ঠানই বলেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই সূচির পরিবর্তন হতে পারে। ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আব্দুর রউফ খান গতকাল বলেন, রাতেও আমাদের লোডশেডিং করতে হয়। যখন যে বিদ্যুতের বরাদ্দ পাই তা বণ্টন করা হয়। তাদের চাহিদা ১ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট।
কিন্তু এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছি ১০০০ থেকে ১,১৫০ মেগাওয়াট। ফলে দিনে-রাতে ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শ্যামপুরের ১২ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের তালিকা ভুল বলেও এই কর্মকর্তা দাবি করেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে দেশে গত ২৪শে আগস্ট থেকে অফিস-আদালত সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে দুইদিন ছুটি ভোগ করছে। তারপরেও কেন বিদ্যুতের লোডশেডিং, প্রশ্ন সাধারণের। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র হিসাব অনুযায়ী, গতকাল ঢাকায় লোডশেডিং হয়েছিল ৪৮০ মেগাওয়াট। এই দিন সারা দেশে সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট। তাতে লোডশেডিং ধরা হয় ১ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। প্রাক্কলিত সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ৯ হাজার ৬৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।
পিডিবি’র ওয়েব সাইটে উল্লিখিত বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ৪৮০ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ৪ হাজার ৪১৯ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম এলাকায় লোডশেডিং ১৭০ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট, খুলনা এলাকায় চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং শূন্য, রাজশাহী এলাকায় চাহিদা ১ হাজার ৪৬৬ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং শূন্য, কুমিল্লা এলাকায় ১৮০ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩১ মেগাওয়াট, সিলেটে ৬৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ৪৬১ মেগাওয়াট, বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং শূন্য এবং চাহিদা ৩৭৬ মেগাওয়াট, রংপুর অঞ্চলে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং চাহিদা ৮১৪ মেগাওয়াট। যদিও দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।