জুমবাংলা ডেস্ক : বন্যার্তদের সহায়তায় শুকনো খাবার- মুড়ি-চিড়া-মোমবাতি, গুড়ের সংকটে রাজধানীবাসী। সম্প্রতি সারা দেশে বন্যার কারণে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তার তুলনায় সরবরাহে প্রায় কয়েকগুণ কম থাকায় বাজারে দেখা দিয়েছে এসব পণ্যের তীব্র সংকট। রাজধানীর চকবাজার, মৌলভীবাজার ও কারওয়ান বাজার বিখ্যাত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে বন্যার্তদের সহায়তায় শুকনো খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা বাড়ে এসব এলাকার দোকানগুলোতে। মুড়ি-চিড়া-গুড় কিনতে এসব বাজারে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা পেশাজীবীরা ভিড় করতে থাকেন।
সোমবার (২৬ আগস্ট) কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দল চিড়া- মুড়ি ও মোমবাতিসহ বেশ কিছু শুকনো খাবার কিনতে এসেছিলেন চকবাজার এলাকায়। সে সময় তাদের দলনেতা ছিলেন মোস্তফা হাসান মাসুদ ও ইমরান হোসেন। ইমরান হোসেন কালবেলাকে বলেন, গতকাল মুড়ি ও চিড়া বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে পারলেও মোমবাতি কিনতে পারিনি। চকবাজার এলাকার সব দোকানেই খুঁজেছি কিন্তু মোমবাতি পাইনি। দোকানদাররা বলছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট থাকায় এসব এখন সোনার হরিণ বিশেষ করে মুড়ি-চিড়া ও মোমবাতি। এছাড়াও বাজারে বোতলজাত বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়েছে।
এদিকে চকবাজারের মোমবাতির পাইকারি ব্যবসায়ী জামাল চিশতি বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ বছর বন্যার কারণে মোমবাতির চাহিদা তিনগুণ বেশি। চাহিদার তুলনায় মোমবাতি সরবরাহ করতে পারছে না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী মোমবাতি সরবরাহ করতে পারছি না ক্রেতাদের কাছে। যা কিছু পাচ্ছি তাও দাম বেশি দিয়ে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিন কারওয়ানবাজারে পণ্য কিনে ভ্যান ও পিকআপে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক দল শিক্ষার্থী। এ অবস্থা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। বিকেলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, চিড়া-মুড়ির দোকানে বেশ ভিড়। এক দোকানে ৫০০ কেজি মুড়ি আর ৫০০ কেজি চিড়া কিনতে এসেছেন দুজন ব্যক্তি। তবে ব্যবসায়ী রমজান আলী ক্রেতাদের বলেন, এখন চিড়া-মুড়ি কোনোটাই নেই। তাদের সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করতে বলেন এই ব্যবসায়ী। কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেট থেকে মুড়ি ও চিড়া কিনতে এসেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল শিক্ষার্থী। তারা কয়েকজন দোকান থেকে বস্তায় ভরা চিড়া কাঁধে করে নিয়ে একটি ভ্যানে উঠাচ্ছিলেন। কালবেলার কথা হয় তাদের মধ্যে থাকা এক শিক্ষার্থী রোহানুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা মূলত ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ফান্ডিং করে বন্যাদুর্গত জেলা ফেনী, সিলেট, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর মানুষের জন্য সামান্য সাহায্য নিয়ে যাচ্ছি। তারা পানিবন্দি, বন্যার পানিতে তাদের মধ্যে অনেকে ঘরবাড়িসহ সর্বস্ব খুইয়েছেন। তাই সাধ্য অনুযায়ী আমরা তাদের জন্য শুকনো খাবার ও জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছি। তবে বাজারে চিড়া-মুড়ি, গুড়, মোমবাতিসহ প্রায় সব ধরনের জরুরি পণ্যের সংকট ও উচ্চমূল্য। তিন দিন আগে ৫০০ কেজি চিড়ার জন্য টাকা অ্যাডভান্স করেছি। সে চিড়া আজ দোকানদার আমাদের বুঝিয়ে দিল। এছাড়া মোমবাতি ও মুড়ি চাহিদা অনুযায়ী পাইনি। টাকা থাকলেও চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনতে হচ্ছে, উচ্চ মূল্যে কিনতে হয়েছে। কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেট গুড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, গত দুই দিন ধরে গুড় সংকটে বিক্রি বন্ধ আছে। গুড় দোকানে আসার আগে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে রেখেছে। উৎপাদনকারীদের কাছে গুড় চেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী। দামও বেড়েছে, আগে আঁখের গুড় কেজিপ্রতি বিক্রি করতাম ১০০-১১০ টাকা, যা গতকাল কিনেছি ১১৫-১২০ টাকা করে। বিক্রি করছি ১৩০ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেট চিড়া-মুড়ি ব্যবসায়ী মের্সাস মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ বলেন, চিড়া-মুড়ি নেই বললেই চলে বাজারে। কিছু প্যাকেট জাত চিড়া-মুড়ি পাওয়া গেলেও তার দাম বেশি। ৫০০ গ্রাম মুড়ির প্যাকেট ৭০ টাকা এবং চিড়া ৭৩ টাকা বিক্রি করছি। খোলা কোনো চিড়া-মুড়ি পাচ্ছি না, যা আসছে তাও আসার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।