জুমবাংলা ডেস্ক : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। দেশে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দাবিও জানান তিনি।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ কমিশন গঠনে আমি অনেক দৃঢ় অবস্থানে আছি। পুলিশের অস্ত্র কি করে সাধারণ পোশাকের মানুষের হাতে গেল? তা নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। ডিজিএফআইর কাজ ছিল আন্তঃবাহিনীর নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করা, সময়ের সঙ্গে যা বদলে গেছে। পাঁচ আগস্ট সরকারের পতন না হলে আমি এবং আমার সাথের লোকজন আয়নাঘরে বন্দি হতাম।
তিনি আরও বলেন, পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট নিয়ে কাজ করা হবে। নৌ মন্ত্রণালয়ের নাম পাল্টে জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রণালয় নাম রাখার প্রস্তাব করব আমি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০৪৮টি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সামনে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে আমাদের সবাইকে।
মুনিরা খান বলেন, সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় আমাদের এই সরকারকে দিতে হবে। আমরা যেন অধীর না হই, অধৈর্য না হই, ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা আমাদের সবার প্রয়োজন।
জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার পরিত্যাজ্য বললেও পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলা উচিত আমাদের। মানবাধিকারের সংকট এ দেশে ছিল, আছে। আমরা জানতে চাই, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কি কি সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন? র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মতো এলিট আইন প্রয়োগকারী ইউনিট এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা হয়রানি ও অপব্যবহার রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
পল্লব চাকমা বলেন, মানবাধিকার কমিশনের আঞ্চলিক অফিস থাকলেও মানুষ জানে না বিধায় মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করতে পারছে না। রাজশাহীতে সাঁওতালরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
মো. নূর খান বলেন, আমাদের ঘুরেফিরে দিন শেষে আমাদের রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ফেরত যেতে হবে। মানবাধিকার কমিশন গঠনে কার্যকারিতায় কোনো স্বচ্ছতা নেই। পনেরো বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ হলো এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলন। নিকট অতীত নিয়ে আলোচনা করা হয়, পূর্বের কথা বলি না। সরকারের উচিত যে স্থাপনাগুলোতে মানুষকে গুম করে রাখা হতো, আয়নাঘর, টর্চার সেল- সেগুলোকে সংরক্ষণ করা। বিগত ১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। যারা তদন্তে ছিলেন সে সময়, তাদের আসামি হিসেবে যুক্ত করা প্রয়োজন। কোন প্রক্রিয়ায় আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে গড়ে তুলছি, তা নিয়ে যেন কথা বলি। সেনাবাহিনীর নিচু থেকে উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তাকে গুম করা হয়েছে, আমরা জানতাম না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে।
জয়া শিকদার বলেন, ট্রান্সজেন্ডার মানুষ হিসেবে কখনো গ্রহণযোগ্যতা পাইনি। আমাদের সামাজিকভাবে মানুষ হেনস্থা করেছে। পরিবার থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়, রাষ্ট্রের কাছে আমরা কোনো দাবি-দাওয়া পেশ করতে পারিনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে রিপোর্ট করেছে আমাদের নিয়ে তা কখনোই গণমাধ্যমে আসেনি।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্বে রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণাপত্র পড়া প্রয়োজন। ভুল সংশোধনের মাধ্যমে সংস্কারের শুরু হয়। বর্তমান সরকার আন্দোলনের পর তা নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করেনি। অতিদ্রুত পিলখানা গণহত্যা, হেফাজত গণহত্যা নিয়ে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদেরও অনেক আশা ছিল। কমিশন আগেও ছিল, কিন্তু সেখানে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও আশা বেঁধেছিলাম আমরা, ফল পাইনি। রাষ্ট্রের চরিত্র বদলাতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কারে তরুণদের সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ করতে হবে। ছাত্রদের যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ব্যবহার না করা যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ।
অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, বিচারব্যবস্থা নিয়ে আমি শঙ্কিত। প্রায় আটশ জন মারা গেছে, সে কয়টি মামলা রুজু হওয়ার কথা ছিল। আইনের সংস্কারে কাজ করতে গেলে অনেকগুলো বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন।
এছাড়া আলোচকদের মধ্যে ছিলেন সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান, গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান, ট্রান্স নারী অধিকার কর্মী জয়া শিকদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, নারী অধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান, ‘মায়ের ডাক’-এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নাইমা আক্তার রীতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তৌহিদ সিয়াম, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া ও জি নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।