জুমবাংলা ডেস্ক : ‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা’- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না; এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন… ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রন্থ প্রকাশনার এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এরকম মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই সভা হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রস্থটির প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথাবার্তা গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো না ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপরে ইনফ্ল্যাশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কীভাবে ঠিক থাকবে? ছাত্রজীবনে ভালো রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। মূল্যবোধ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে সেসবের কিছু ছিল। মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিল সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন। আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীরও (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন… একেবারে করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে মূল্যবোধগুলো বারবার তাড়া করত… এখনো আমাদের এটা তাড়িত করে মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে।
ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপরদিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল যারা আমাদের মার দিয়েছে আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এনএসএফ নিয়ে গেছে… তাদের সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন নাম বলব না। আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে তোমরা কী করেছ? অত্যন্ত দুঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেছে কি না জানি মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে নাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শোনেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণা‘র প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে হবে সেটা নিঃসন্দেহে ৮/১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরূপণ করতে পারব না। আমাদেরই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে, নিরূপণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজন। ১৯০৫ সালে রাশিয়াতে পাঠ্য বিপ্লবের পরে লেনিন বলেছিলেন, এখন প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ঢুকেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ওই সময়ের জন্য ওটা ছিল একটা মোক্ষম একটা কৌশল যে কারণে ১০১৭ সাল (রুশ বিপ্লব) হতে পেরেছে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারব, মুক্তভাবে আমাদের মতপ্রকাশ করতে পারব এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে সেটা কমপ্রোমাইজড হচ্ছে আমি যেটাকে বলি, নিম সার্বভৌম অবস্থা সেই নিম সার্বভৌম অবস্থা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবৃএই সবকিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদের পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, আত্মদানের এবং মানুষ ও দেশকে ভালোবাসার। আজকে আমরা যদি সবাই সেই স্বাধীনতা ও দেশকে ভালোবাসার মঞ্চে কিছু অবদান রাখতে পারি সেটাই যথেষ্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটস অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি ভোটের দিনটা ছিল উৎসবের দিন। ’৫৪ সালে আমি ছোট কিন্তু যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা কিছু কিছু যেন মনে আছে এখন এবং অন্যান্য ইলেকশন। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেল? নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভোট ব্যবস্থায় এই দুরবস্থা বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইটি একটা রাজনৈতিক দলিল। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা এই বইতে আছে। আমি মনে করি এই বইটা লেখকের একটা বিরাট অবদান। সবাই বইটি পড়বেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।