নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত সেই ‘জুলাই যোদ্ধা’ ছাত্রদল নেতা মুহাম্মদ বাবলু আজ ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধ। অর্থাভাবে থমকে গেছে মাত্র ২১ বছর বয়সী এই তরুণের চিকিৎসা।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের আবুল কাশেমের ছেলে বাবলু বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গী বেপারীবাড়ি এলাকায় বড় ভাই আব্দুল্লাহর সঙ্গে থাকেন। তিনি টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক এবং এ বছর টঙ্গী সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার ধানমন্ডির নিউ লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তার খাদ্যনালিতে ‘গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল অ্যাডেনোকার্সিনোমা গ্রেড-৩’ নামের ক্যানসার শনাক্ত করেন।
প্রথমে চিকিৎসকদের পরামর্শে তার কেমোথেরাপি শুরু হয়। চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট আটটি কেমোথেরাপি প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত চারটি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি থেরাপির জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, যার জন্য লাগবে কয়েক লাখ টাকা।
বাবলু বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আরও চারটি কেমো বাকি। অপারেশন করার সামর্থ্য তো নেই, পরের কেমোগুলোর খরচই জোগাড় করতে পারছি না।”
তার বাবা আবুল কাশেম বলেন, “ছেলের চিকিৎসার জন্য যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করেছি। এখন আমরা পুরোপুরি নিঃস্ব।”
রাজনীতিতে সক্রিয় বাবলু ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই উত্তরা বিএনএস সেন্টারে অনুষ্ঠিত আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হন। এখনো তার শরীরে একটি ছররা গুলি রয়ে গেছে। বাবলু ছিলেন শেখ হাসিনা বিরোধী প্রায় সব আন্দোলনের অগ্রভাগের কর্মী।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাবলু বলেন, “আমি বাঁচতে চাই। আবার রাজপথে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকারের জন্য লড়তে চাই।”
তবে আক্ষেপের সুরে তিনি যোগ করেন, “আমি ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক। সংগঠনের জন্য আমার তরুণ জীবন উজাড় করেছি, কিন্তু সহযোগিতা পাইনি। কেবল টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির এক নেতা ১০ হাজার ও মহানগর ছাত্রদলের এক নেতা ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর বলেন, “বাবলুর বিষয়টি আমরা জানি। সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন বিষয়টি দেখছেন।”
মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন জানান, “আমরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহায়তা করেছি, নিয়মিত খোঁজও নিচ্ছি।”
টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব আলাউদ্দিন সুমন বলেন, “বাবলুর মতো কর্মীর জীবন কয়েক লাখ টাকার অভাবে থমকে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টের। এখনো উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা মেলেনি।”
বাবলুর পরিবার ও সহপাঠীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন, যাতে এই তরুণ রাজপথযোদ্ধা আবারও সুস্থ হয়ে জীবনযুদ্ধে ফিরতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



