জুমবাংলা ডেস্ক: ‘মৌ মাছি মৌ মাছি, কোথা যাও নাচি নাচি। দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে। দাঁড়াবার সময় যে নাই’- ঠিক এমনটাই ঘটেছে রাজশাহীর মৌচাষিদের ক্ষেত্রে। চলতি সরিষার মৌষুমে মৌচাষীদের মতনই চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আর তাই, এবারের মধু আহরণের মাত্রাটাও ছিল দ্বিগুনেরও বেশি। এ বছর প্রায় সাত কোটি টাকা মধুর বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় মৌচাষিরা বলছেন, এ বছর সরিষার আবাদ ও উৎপাদন অনেক হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এ কারণে মধু আহরণের পরিমাণও দিগুনের বেশি। সরিষার মৌসুমে ডিসেম্বরের শুরুর দিক থেকেই মধু আহরণে লেগেছিলেন মৌয়ালরা।
তবে এই মধু উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কৃষিবিদদের দাবি, সরিষায় রিলে ক্রপিং নামে নতুন পদ্ধতির চাষ। ‘রিলে ক্রপিং’ পদ্ধতিতে সরিষার চাষাবাদে কৃষক যেমন ধানের মধ্যে সরিষার আগাম বপন করতে সক্ষম, ঠিক তেমনি খুব দ্রুত ও অনেক বেশি উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। এই মৌসুমে সরিষার আবাদে রিলে ক্রপিং পদ্ধতির অনুসরণ করায় মধুর চাষ ও আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই এবছর বাণিজ্যিকভাবে মধুচাষে মৌয়ালরা প্রচুর লাভবান হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ মৌসুমে রাজশাহীতে ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয় ৪২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে এখনো সরিষার পরিপূর্ণ কর্তন না হয় কৃষি দফতর জানিয়েছে এ বছর সরিষার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৯৯৮ টন। এবার চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৮৩৭টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় মোট এক লাখ ৬২ হাজার ৪৬০ কেজি মধু আহরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহীতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১০ হেক্টর। তবে ওই মৌসুমে আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ১৫৬ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৪০ হাজার ৮২৭ টন। সেক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ফলন এসেছে ১.৫৬ হেক্টর। এ মৌসুমে রাজশাহী জেলার ২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৯১৬টি মৌবক্স লাগানো হয়। তাতে ২১ হাজার ২৭৭ কেজি মধুর উৎপাদন হয়।
গোদাগাড়ী উপজেলার মধুচাষি আতাউর রহমান ৪৫টি বক্সে এ পর্যন্ত সরিষার মধু আহরণ করেছেন প্রায় ৪০ মণ। গেলো বছর সরিষার মধু আহরণ করেছিলেন ২০ মণ। এবার তার দ্বিগুণ হয়েছে আহরণ। মধু বিক্রি করছেন কেজি প্রতি ৪০০-৪৫০ টাকায়। এবার খরচ বাদ দিয়ে কম করে হলেও তিন থেকে চার লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, আর কয়েকদিন পর সরিষার মধু আহরণের পর দিনাজপুর যাবেন লিচুর মধু আহরণের জন্য। গেলো বছর লিচুর মধু আহরণ করেছিলেন প্রায় ১০ মণ। ফলন ভালো হলে এবারও তেমনি লিচুর মধু আহরণ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষিবিদ ও অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শারমিন সুলতানা বলেন, গেলো বছর যেখানে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল সেখানে এবার প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে মধুর আবাদ হয়েছে। আর এবার সরিষার ফুলও অনেক বেশি হয়েছে। যেখানে সরিষার ফুল যতবেশি হবে, মধুর উৎপাদনও ততবেশি পরিমাণে হয়। আর এ কারণে এবার সরিষায় ফুল আসার মাত্র ৭-১০ দিনের মাথায় মৌচাষিরা মধু আহরণ করতে পেরেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর বাণিজ্যিকভাবে যারা মধু আহরণ করে তারা নয়, তাদের সঙ্গে সাধারণ চাষিরাও এবার তাদের মাঠে বক্স বসিয়ে মধু আহরণ করেছে। ফলে এ বছর প্রায় ৮ গুণ মধুর উৎপাদন বেড়েছে। এতে সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক চাষিরাও প্রচুর লাভবান হয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে রাজশাহীতে এ বছর প্রায় ৭ কোটি টাকার মধু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে যা গেলো যেকোনো সময়ের চেয়ে রেকর্ড বলা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।