রঞ্জু খন্দকার ও সোহান আমিন, রাজশাহী থেকে: ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের ‘টি (T)’- এর নিচের সরু অংশ ছাড়া সব দিকেই প্রমত্তা পদ্মা। বিশাল সব ঢেউ আছড়ে পড়ছে ‘টি’ এর মাথায়। বাকি সব দিককেও ছুঁয়ে যাচ্ছে পদ্মা। তবে তা মৃদুমন্দ, ছলাৎ ছলাৎ।
ভ্রমণপ্রিয় পাঠকেরা ইতোমধ্যে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, বলা হচ্ছে পদ্মানগরী রাজশাহীর টি-বাঁধের কথা।
বুঝতেই পারছেন, ইংরেজি ‘টি’ বর্ণের মতো আকৃতি হওয়ার কারণে এ বাঁধের নাম ‘টি-বাঁধ’। এটি শুধু রাজশাহীর শহররক্ষা বাঁধই নয়, এটি নগরবাসীর বিনোদনেরও অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
নগরবাসী বলছেন, রাজশাহীর নগরপিতা হিসেবে এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরকে নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি টি বাঁধকে বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বাঁধে করেছেন বসার জায়গা, রাতে আলোর ব্যবস্থা। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশি টহল। নগরবাসী এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিরাপদে নিশ্চিন্তে ঘোরাঘুরিসহ আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
রাজশাহী সিটি মেয়র জুমবাংলাকে জানান, তিনি নান্দনিকতাকে হৃদয়ে ধারণ করেন। মেয়র হওয়ার পর সিটিতে এর বহির্প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। টি-বাঁধসহ রাজশাহী নগরীর যেখানে যাবেন সেখানেই নান্দনিকতার ছোঁয়া দেখতে পাবেন।
টি-বাঁধে ঘুরতে গিয়ে এর সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা ও রাতের বিভিন্ন রূপ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
২ অক্টোবর সন্ধ্যার পর গিয়ে দেখা যায়, টি-বাঁধে স্থাপন করা সড়কবাতি সব জ্বলে উঠেছে। বাতির সে আলো পদ্মার বুকে পড়ে এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি করেছে। ‘টি’ এর নিচের দন্ড বরাবর হেঁটে মাথায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ঢেউ মাথা কুটে মরছে সেখানে। দূরে নদীর মাঝখানে টিমটিমে আলো জ্বলছে।
কয়েকজন জানালেন, ওগুলো জেলেনৌকা। তারও পরে ভারতের সীমান্ত।
বাঁধে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন অনেকে। কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে। একস্থানে বসে চা পান করছিলেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
এক পুলিশ সদস্য বললেন, তাঁরা সকাল থেকেই পালাক্রমে এখানে টহল দেন। রাত আটটা পর্যন্ত বাঁধে থাকার নিয়ম। তবু সবাই উঠতে উঠতে সাড়ে আটটা, নটা বেজে যায়। তবে যা-ই হোক, এ বাঁধ এলাকা সবার জন্য নিরাপদ।
রাজশাহীরই পবা উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে টি-বাঁধে ঘুরতে এসেছিলেন শাহীন মিয়া। তিনি বললেন, শহরে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। সেখান থেকে বাঁধে। এমন সুন্দর জায়গা, ঘুরে বেশ ভালো লাগল।
বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী। তাঁর ভাষ্য, এলাকাটি খুব নিরাপদ। কারও উপদ্রব নেই। সময় পেলেই এখানে ঘুরতে আসেন।
৩ অক্টোবর দুপুরে গিয়ে টি বাঁধে লোকজনকে ঘুরতে দেখা যায়। সে সময় ‘টি’-এর একেবারে বোগলে বটগাছের নিচে শানবাঁধানো সিঁড়িতে অনেকে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
সিঁড়িতে বিশ্রামরত ষাটোর্ধ্ব রমজান আলী বললেন, এখন পূজার ছুটি চলছে। তাই নাতির স্কুল বন্ধ। ওকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।
বটগাছের নিচে পাঁচ বছর ধরে চায়ের দোকান করেন জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন, এই বাঁধে আগে থেকেই লোকজন ঘুরতে আসত। তবে আগে জায়গাটি নিরাপদ ছিল না। এত দোকানপাট, বসার জায়গা, আলো ছিল না। লিটন ভাই মেয়র হওয়ার পর থেকে জায়গাটি সুন্দর করে তোলেন। এখানে দিনে কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসেন। সবাই নিরাপদে ঘুরতে পারেন।
৪ অক্টোবর বিকেলে টি-বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে বাঁধা নৌকাগুলো একে একে ছেড়ে যাচ্ছে মাঝ নদীতে। অনেকে দলবেঁধে, কেউবা দুয়েকজন মিলে উঠে যাচ্ছেন সেসব নৌকায়।
একটি নৌকার মাঝি মজনু মিয়া। তিনি বললেন, এখান থেকে নৌকা নিয়ে তাঁরা নদীর মাঝে জেগে ওটা চরে যাবেন। সেখানে কাশফুল ফুটে আছে। লোকভেদে নৌভ্রমণে জনপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ করে টাকা নিচ্ছেন।
নৌভ্রমণে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন আসমাউল হুসনা। তিনি এসেছিলেন ঢাকা থেকে। তিনি বললেন, আগে কখনো টি-বাঁধের নাম শোনেননি তিনি। এখানে এসে শুনেই ছুটে এসেছেন। ঢাকায় এত সুন্দর জায়গা খুবই কম। পদ্মাতীরের এই বাঁধ দেখে তিনি মুগ্ধ।
আসমাউল হুসনা আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা থাকলে একটা বাঁধও যে এত আকর্ষণীয় করা যায়, এখানে না এলে বুঝতাম না। এ জন্য এখানকার মেয়রকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। সঙ্গে নিরাপদ পরিবেশ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পাবে প্রশাসনও।’
রাজশাহী সিটি মেয়র এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘টি-বাঁধে বসে পদ্মাপাড়ের নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশ যাতে মানুষ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা নগরীর বিউটিফিকেশনের জন্য আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পর্যটকেরা রাজশাহীকে অন্য রূপে দেখতে পাবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।