ব্যস্ত সময়সূচী, সামাজিক সমাবেশ অথবা গভীর রাতে খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে অনেকের কাছেই দেরিতে খাবার খাওয়া একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে দেরিতে খাবার খাওয়া বিশেষ করে রাত ৯টার পরে সামগ্রিক সুস্থতার জন্য গুরুতর পরিণতি হতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত থেকে শুরু করে ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তাই আপনার খাবারের সময় নতুন করে ঠিক করা উচিত। মাঝে মাঝে দেরিতে খাবার খেলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই, তবে সব সময় যদি রাত ৯টার পরে খাবার খেলে তা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
১. ঘুমের ব্যাঘাত
রাতে দেরিতে খাওয়ার অভ্যাস ঘুমের মানকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা দেরিতে খায় তারা দেরিতে ঘুমায়, যার ফলে ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়। তাছাড়া দেরিতে খাবার হজমের অস্বস্তির কারণ হতে পারে, এমনকী অদ্ভুত স্বপ্নও দেখতে পারেন।
২০১৫ সালে দুই কানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানীর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যারা দেরিতে খাবার খায় তাদের অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্রামের সময় খাবার হজম করতে শরীরের সমস্যা হওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। এছাড়াও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষণা সহযোগী অধ্যাপক নামনি গোয়েল ব্যাখ্যা করেন:
দেরিতে খাওয়ার ফলে ওজন, শক্তি এবং হরমোন চিহ্নিতকারীর নেগেটিভ প্রোফাইল তৈরি হতে পারে, যেমন উচ্চ গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন, যা ডায়াবেটিসের সঙ্গে জড়িত। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড, যা হৃদরোগের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে যুক্ত।
২. ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বৃদ্ধি
তাড়াতাড়ি রাতের খাবার হজম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার হজমের জন্য ভালো। হজমের জন্য উপকারী যেকোনো খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীর সূর্যের আলোর সঙ্গে যুক্ত। আমরা যত দেরিতে খাই, খাবার তত বেশি অন্ত্রে থেকে যায়, যা হজমকে প্রভাবিত করে। যদি তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খান, তাহলে তাড়াতাড়ি তৃপ্তি অর্জন করবেন এবং শরীর খাবারটি আরও ভালোভাবে ব্যবহার করবে। অব্যবহৃত ক্যালোরিগুলো চর্বি হিসাবে জমা হয়।
যেহেতু সন্ধ্যায় বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, তাই রাতের খাবার চর্বিতে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার ফলে সময়ের ধীরে ধীরে অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত দেরিতে খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. দুর্বল হজম এবং পেট ফাঁপা
রাতে দেরিতে খাওয়ার অর্থ খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে যাওয়া, যার ফলে সঠিক হজমের জন্য খুব কম সময় থাকে। এর ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, পেট ফাঁপা এবং বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবার যথাযথভাবে আলাদা করা হলে শরীর সর্বোত্তমভাবে কাজ করে, যা খাবারকে দক্ষতার সঙ্গে ভেঙে ফেলার সুযোগ দেয়।
৪. হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি
খাবারের সময় হৃদরোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড রোগ, পিসিওডি এবং হৃদরোগের রোগীদের জন্য দেরিতে রাতের খাবার বিশেষভাবে ক্ষতিকারক হতে পারে। আমরা আমাদের রাতের খাবারে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে অভ্যস্ত। ডাল এবং ভাজা থেকে শুরু করে শাক-সবজি এবং মাংস পর্যন্ত, আমাদের খাবারে প্রায়শই উচ্চমাত্রার লবণের মাত্রা থাকে। রাতের বেলা এই লবণাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পানি ধরে রাখা এবং পেট ফাঁপা হতে পারে, এটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
আদর্শ রাতের খাবারের সময়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে রাতের খাবারের জন্য সর্বোত্তম সময় হলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে, যা শরীরকে ঘুমানোর আগে খাবার হজম করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়। এটি উন্নত বিপাকীয় স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, হজম উন্নত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।