আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে কর্নাটক রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দল সেকুলারের নেতা এইচ ডি কুমারাস্বামী অভিযোগ করেছেন, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য কারা চাঁদা দিচ্ছেন আর কারা দিচ্ছেন না, ‘নাৎসি কায়দায়’ আরএসএস না কি তা চিহ্নিত করে রাখছে। খবর বিবিসি বাংলার।
আরএসএসের পক্ষ থেকে অবশ্য এই বক্তব্য নস্যাৎ করে বলা হয়েছে, এই অভিযোগের জবাব দেয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যায় যে রামমন্দির বানানো হচ্ছে তার জন্য সারা দেশ জুড়েই অর্থ সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছে একটি ট্রাস্ট।
তবে সেই চাঁদা তোলার পদ্ধতিকে ঘিরে নানা রাজ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিচ্ছে, যে তালিকায় সবশেষ সংযোজন হল কর্নাটক।
বস্তুত অযোধ্যায় রাজসিক রামমন্দির নির্মাণের জন্য সারা ভারত থেকে ইতিমধ্যেই যে ১০০০ কোটি রুপিরও বেশি সংগৃহীত হয়েছে, কদিন আগেই সে কথা ঘোষণা করেছে সরকারের গঠিত ট্রাস্ট।
মন্দির নির্মাণের জন্য বহু মানুষ যেমন ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ ট্রান্সফার করছেন, তেমনি বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরাও দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মন্দিরের জন্য চাঁদা তুলছেন।
এই পটভূমিতেই মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন কর্নাটকের সিনিয়র রাজনীতিবিদ এইচ ডি কুমারাস্বামী। একের পর এক টুইট করে তিনি দাবি করেছেন কোন কোন বাড়ি থেকে মন্দিরের জন্য চাঁদা দেওয়া হচ্ছে আর কারা দিচ্ছে না আরএসএস সেগুলোকে চিনে রাখছে।
তিনি বলেন, ঠিক যেভাবে নাৎসি জমানায় হিটলার করেছিলেন, তার শাসনে মৃত্যু হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের।
ঘটনাচক্রে দিনকয়েক আগে মহারাষ্ট্রের শাসক দল শিবসেনাও মন্দিরের জন্য এভাবে চাঁদা তোলার তীব্র বিরোধিতা করেছিল।
শিবসেনা নেতা ও দলীয় মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেছিলেন, শ্রীরামচন্দ্র অযোধ্যার রাজা ছিলেন। সেই রাজার জন্য আপনি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টাকা চাইবেন, তাতে যেমন রাজার অপমান- তেমনি হিন্দুত্বের অপমান।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, মন্দির বানানোর জন্য ধনীরা, শিল্পপতিরা নিশ্চয় অর্থ দেবেন, শিবসেনাও এক কোটি টাকা দিয়েছে- কিন্তু ঘরে ঘরে চাঁদা তোলার লোক পাঠিয়ে আপনারা কার প্রচার করতে চাইছেন? রামচন্দ্রের নামে এই রাজনৈতিক নাটক বন্ধ করুন।
কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কুমারাস্বামীর অভিযোগ অবশ্য আরও গুরুতর। তিনি দাবি করছেন, কারা রামমন্দিরের জন্য চাঁদা দিচ্ছেন না তাদের তালিকা তৈরি করে রাখছে আরএসএস।
জার্মানিতে নাৎসি পার্টি আর ভারতে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস যে একই সময়ে ও একই ধরনের আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠেছিল, ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃত করে সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তবে কর্নাটকে আরএসএসের মুখপাত্র ই এস প্রদীপকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই অভিযোগ “এতটাই ভিত্তিহীন” যে তারা এর কোনও জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করছেন না।
এদিকে বিজেপির মুসলিম নেত্রী নিঘাত আব্বাস আবার বলছেন, মন্দিরের জন্য চাঁদা দেয়ার ‘অধিকার’ থেকে কোনও নাগরিককেই বঞ্চিত করা উচিত নয়।
মিস আব্বাসের কথায়, হিন্দুস্তানের জনতা রামমন্দির নির্মাণের এই কর্মযজ্ঞে ভাগীদার হতে চান এবং পুণ্যের শরিক হতে চান। রাজনীতিবিদরা নিজেরা পুণ্য কামাবেন অথচ সাধারণ মানুষ থেকে সেই পুণ্য থেকে বঞ্চিত করবেন, এটা কেমন কথা?
যারা রামমন্দিরের জন্য অর্থ সংগ্রহের বিরোধিতা করছেন, তারা মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এটা চরম লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন মিস আব্বাস।
রামমন্দির নির্মাণের সাহায্যে এগিয়ে আসতে ভারতীয়দের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন দেশের বহু তারকাও – যাদের অন্যতম বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার।
অক্ষয় কুমার বলছেন, রামায়ণে রামকে সেতুবন্ধনে যেমন বানরসেনারা বা কাঠবেড়ালি পর্যন্ত নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্য করেছিল, তেমনি প্রত্যেক দেশবাসীরও নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ভব্য রামমিন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।
কিন্তু স্বেচ্ছায় যারা রামমন্দির নির্মাণে অর্থ দিতে রাজি নন- তাদের শত্রু হিসেবে চিনে রাখা হচ্ছে, কর্নাটকে এই অভিযোগ ওঠার পরই গোটা বিষয়টি আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে।
মি. কুমারাস্বামীর পার্টি জনতা দল (সেকুলার) বা শিবসেনা এখন প্রশ্ন তুলছে মন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা তোলার পদ্ধতি নিয়েও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।