আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া আর ইউক্রেন যুদ্ধের দামামার যেন শেষ নেই। একদিকে পশ্চিমা শক্তিতে ভর করে আছে ইউক্রেন, অন্যদিকে সব চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কোনো রকমের ছাড় না দেয়ার হুঁশিয়ারি রাশিয়ার। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে সেনা পাঠায় তাহলে তা রূপ নিতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধে এমনই বার্তা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রশ্ন হলো যদি পশ্চিমারা পরমাণবিক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায় তাহলে রাশিয়া কী দিয়ে তা মোকাবিলা করবে? তাদের বহরে কী এমন অস্ত্র রয়েছে, যা শক্তিশালী পশ্চিমাদের রুখে দিতে পারে? দেখে নেয়া যাক রাশিয়ার শক্তিমত্তা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিমত্তা এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রাশিয়ার কাছে কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র আছে?
উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক ওয়ারহেডের ভান্ডার রয়েছে। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের (এফএএস) মতে, পুতিন প্রায় ৫ হাজার ৫৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজা ২০০ স্থগিত রয়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই অক্ষত। এছাড়াও প্রায় ৪ হাজার ৩৮০টি দীর্ঘপাল্লার এবং স্বল্প-পরিসরের কৌশলগত অস্ত্র রয়েছে, যা পারমাণবিক শক্তি দ্বারা ব্যবহার করা যাবে।
মজুত করা ওয়ারহেডগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৭১০টি কৌশলগত ওয়ারহেড মোতায়েন করা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৭০টি স্থল-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে, প্রায় ৬৪০টি সাবমেরিন-লঞ্চ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে এবং প্রায় ২০০টি ভারী বোমারু ঘাঁটিতে মোতায়েন করা রয়েছে।
এই ধরনের সংখ্যার মানে হলো যে, মস্কো বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিল প্রায় ৩০ হাজার।
কোন পরিস্থিতিতে রাশিয়া এগুলো ব্যবহার করবে?
রাশিয়ার প্রকাশিত ২০২০ পারমাণবিক মতবাদের শর্তমতে, একজন রুশ প্রেসিডেন্ট একটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে পারবেন। বিশেষ করে পারমাণবিক বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার করে যদি রাশিয়ার ওপর কোনো আক্রমণ করা হয়, তাহলে তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ রাশিয়ার অস্তিত্বের প্রশ্নে এটি ব্যবহার করা যাবে।
রাশিয়া কি আরও পরমাণু অস্ত্র পাবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ২০২২ সালের পারমাণবিক ভঙ্গিতে দাবি করেছিল, রাশিয়া ও চীন তাদের পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ করছে। এক্ষেত্রে ওয়াশিংটন এই ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
যদিও রুশ বাহিনীর বিশ্লেষণ ২০২৪-এ এফএএস বলেছে, ‘রাশিয়ার পারমাণবিক বিবৃতি ও হুমকিমূলক বক্তব্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগার এবং অপারেশন চলমান আধুনিকীকরণের বাইরে আমাদের ২০২৩ সালের অনুমান থেকে সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে রাশিয়ান কৌশলগত বাহিনী তাদের ওয়ারহেডের সংখ্যা বাড়াতে পারে। কারণ একক ওয়ারহেড মিসাইলগুলোকে একাধিক ওয়ারহেডে সজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।’
রাশিয়া কি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে?
পুতিন বলেছেন, বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষা চালালে, রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করার কথা বিবেচনা করবে।
গত বছর তিনি সমন্বিত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি) রাশিয়ার অনুমোদন প্রত্যাহার করে একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়া কখনো পরমাণু পরীক্ষা করেনি। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সমিতির মতে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে, চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরীক্ষা করেছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বশেষ পরীক্ষা করেছিল ১৯৯০ সালে।
ব্যাপক পারমাণবিক-পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তিতে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষর করেছিল রাশিয়া। তবে তা ২০০০ সালে অনুমোদন করা হয়। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও এখনো তা অনুমোদন করেনি।
কে দেবে রাশিয়া থেকে পরমাণু অস্ত্র ছো ড়ার নির্দেশ?
রুশ প্রেসিডেন্টই রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তথাকথিত পারমাণবিক ব্রিফকেস, বা ‘চেগেট’ (ককেশাস পর্বতমালার মাউন্ট চেগেটের নামানুসারে) সর্বদা প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই থাকে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বর্তমানে সের্গেই শোইগু এবং জেনারেল স্টাফের প্রধান, বর্তমানে ভ্যালেরি গেরাসিমভের কাছেও এই জাতীয় ব্রিফকেস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
মূলত এই ব্রিফকেস হলো একটি যোগাযোগের হাতিয়ার যা প্রেসিডেন্টেকে তার সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং তারপরে অত্যন্ত গোপন ‘কাজবেক’ ইলেকট্রনিক কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রকেট বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করে। কাজবেক ‘কাভকাজ’ নামে পরিচিত আরেকটি সিস্টেমকে সমর্থন করে।
যদি পরমাণু হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয় তবে পুতিন তার ‘ডেড হ্যান্ড’ ব্যবস্থা সক্রিয় করবেন। মূলত কম্পিউটারই ধ্বংসযজ্ঞ শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে। এটি হতে পারে রাশিয়াকে রক্ষা করার শেষ অবলম্বনের মতো।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর পশ্চিমাদের সঙ্গে সবচেয়ে টানাপোড়েনে রাশিয়া। তবে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে কোনোভাবে সংঘাত হলে, বাধতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।