জুমবাংলা ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই কারণে জিনিসপত্রের দামও মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। এভাবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ জীবন যাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এরমধ্যে আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে, এই সময়ে পোশাক শিল্পে রফতানি আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানির (বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স-বিসিআই, যা +৬.৩১) তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ((বিসিআই, যা +১৪.৯১) তুলনামূলক ভালো করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে: যুদ্ধে বিশ্ববাজারে বৃহত্তর সংস্থাগুলির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা।
তবে বি সি আই ২০২৩ কিছুটা ইতিবাচক থাকলেও তা আগের বছরের ( বিসিআই, যা +২৮.৬৯) তুলনায় কম, যা সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যে সূক্ষ¥ অবনতির ইঙ্গিত বহন করে। এর কারণ, লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি, ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও ভোক্তার চাহিদা কমে যাওয়া।
গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ‘দি লাইটক্যাসল বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স ২০২২-২০২৩ (বি সি আই)’ শিরোনামে প্রতিবেদনটির পঞ্চম সংস্করণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে।
দেশের খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানি, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশন, স্থানীয়ভিত্তিক ব্যবসায়িক সংগঠন, স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এস.এম.ই)সহ প্রতিনিধিত্বকারী ১৬৭টি ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ২৫টিরও অধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সাক্ষাতকারভিত্তিক এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশ, বিশ্ব বাজার পরিস্থিতি, সম্ভাবনাময় ব্যবসা ও শিল্প খাত, দেশে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় ব্যবসায়ের গতি প্রকৃতি, অর্থনীতির অবস্থার গভীর পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন ও উত্তর নীরিখে এই ফলাফল উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেননির্মাণ শিল্পের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলী হুসাইন, এসিআই ফার্টিলাইজার এর ব্যবসায়িক পরিচালক বশির আহমদ, রহিম আফরোজ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনাওয়ার মিসবাহ মঈন, নিউএইজ গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ এর ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম ও অন্যন্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মাসরুর রিয়াজ। লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর পরিচালক জাহেদুল আমিন প্রতিবেদনটির মূল বিষয় উপস্থাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লাইটক্যাসেল পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইভদাদ আহমেদ খান মজলিশ। আরও উপস্থিত ছিলেন লাইটক্যাসেল পার্টনার্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিজন ইসলাম।
প্রতিবেদনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেসরকারী খাতে যে প্রভাব পড়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। এতে আরও বলা হয়, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা লাগলেও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে সে জোরালো ধাক্কা আসেনি। বরং সামগ্রিকভাবে বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স সূচক (বিসিআই যা, +৬.৬৯) ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির (বিসিআই যা, +৬.৩১) তুলনায় এসএমই, স্থানীয়ভিত্তিক ব্যবসায়িক সংগঠন (বিসিআই যা, +১৪.৯১) তুলনামূলক ভালো করেছে।
প্রতিবেদনে দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে পাঁচটি মূল সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে: শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, প্রান্তিক উপকারভোগীদের জন্য গৃহীত নীতি বাস্তবায়ন না হওয়া, আর্থিক সুযোগ সুবিধায় প্রবেশগম্যতা না থাকা, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, ও অদক্ষ মানব সম্পদ।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়িক আস্থা বাড়ানো, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের দৃঢ পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রচারের কৌশল গ্রহণ করা, মুদ্রাস্ফীতি কমানো, শিল্পে কাঁচামালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই রিপোর্টে অর্থনীতির এমন কিছু সূচক উঠে এসেছে, যা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিস্থিতিকে তুলে ধরে। দেশের নীতি নির্ধারক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এই ‘বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স’ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনগুলোতে কাজে লাগাতে পারেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের অক্টোবরে খাদ্য মুল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫০ শতাংশ, ২০২৩ সালের মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.০৯ শতাংশ। একই সময়ে (২০২২ সালের অক্টোবর) মুদ্রাস্ফীতি ৮.৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩৩ শতাংশে (২০২৩ সালে মার্চে) উপনীত হয়। প্রতিবেদনে খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২ এর সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতি পরিবারে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খাবারের খরচ বৃদ্ধি ও পরিবারের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য সামগ্রি, টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য রফতানি আয় কমলেও এই সময়ে পোশাক খাতে রফতানি আয় তুলনামূলক বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাতে রফতানি আয় ছিল ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দাঁড়িয়েছে ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।