আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে ড্রোনের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আকাশে দুই দেশের মধ্যে ড্রোনের ‘ডগফাইটের’ সৃষ্টি হয়েছে। ক্রুবিহীন হাজার হাজার ড্রোন ইউক্রেনের আকাশে উড়ছে। এগুলো বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। যেমন, আর্টিলারি ফায়ার পরিচালনা, নজরদারি এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে কাজ করা। এটি যুদ্ধের জন্য এতটাই অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে, গত জুন মাসের শুরুতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ড্রোন যুদ্ধের জন্য নিবেদিত বিশ্বের প্রথম একক শাখা চালু করেছে।
শনিবার অনলাইনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনের ইয়াক-৫২ এবং রুশ ড্রোন আকাশে মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থান করছে।
ড্রোন বিশেষজ্ঞ এবং কর্নেল ব্রুকস টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেমস প্যাটন রজার্স বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের আগে বিশ্ব দুই দেশের ড্রোনের মধ্যে ডগফাইটের মাত্র কয়েকটি ঘটনা দেখেছে। তবে এখন রাশিয়া এবং ইউক্রেন ড্রোন অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। তারা একে অপরের সিস্টেমের বিকাশ ও প্রতিরোধে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সময় এবং দক্ষতা বিনিয়োগ করছে।
ড্রোন ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম ড্রোনসেকের সিইও মাইক মনিক বলেন, ড্রোনগুলো একসময় বহু মিলিয়ন ডলারের সাঁজোয়া যানের ওপর তাদের বিস্ফোরক ব্যবহার করত। এখন তারা সেগুলো অন্য ড্রোনকে টার্গেট করছে, সেগুলোর হুমকি ধ্বংস করার জন্য।
ড্রোনসেকের সরবরাহ করা ইউক্রেনের ওপর দুই দেশের সংঘর্ষের ৪০টিরও বেশি সংঘর্ষের ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছে।
সস্তা এবং সহজলভ্য ডিজেআই ম্যাভিক ড্রোনটির সরাসরি আকাশে দৃশ্যমানতা সীমিত। এর অর্থ হলো, ওপরে ঘোরাফেরা করা একটি ড্রোন একটি স্বতন্ত্র হুমকি।
এপ্রিলের শুরুতে একটি রুশপন্থি চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার একটি ড্রোন সরাসরি ইউক্রেনীয় ডিজেআই ম্যাভিক-৩ ড্রোনের ওপর আছড়ে পড়ে। এর ফলে সেটিকে আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
ড্রোনসেকের সিইও মাইক মনিক বলেন, কিন্তু ২০২২ সালের শুরুর দিকেও এ ধরনের ঘটনার বেশির ভাগই দুর্ঘটনাক্রমে হয়েছিল। তিনি বর্ণনা করেছেন, একটি ছোট বাণিজ্যিক নজরদারি ড্রোন আকাশে একটি শত্রু ড্রোনকে টার্গেট করতে এবং সেটিকে আকাশ থেকে ছিটকে ফেলতে পারে। এই পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই উভয় ড্রোনই আসলে অচল হয়ে যাবে।
ড্রোনসেক বলেছে, ২০২৪ সালে দেখা যাচ্ছে, দূরবর্তী বিস্ফোরণ ক্ষমতাসহ ড্রোনগুলো একে অন্যের নাগালে চলে আসছে। সবচেয়ে সহজ আক্রমণগুলোর মধ্যে একটি হলো, একটি ড্রোন ব্যবহার করে শত্রুর ড্রোন বিধ্বস্ত করা হচ্ছে। বিস্ফোরক সংযুক্ত করা বা ছাড়াই এটি ঘটছে। আক্রমণকারী ড্রোনটিও প্রায়ই ধ্বংস হয়। তবে সবচেয়ে বড় জয় হলো, যখন একটি সস্তা ডিভাইস ব্যয়বহুল কোনো ড্রোনকে ধ্বংস করে।
গত ১ জুন শেয়ার করা একটি ফুটেজ দেখা যায়, একটি রাশিয়ান অরল্যান-১০ ড্রোনকে একটি ইউক্রেনীয় এফপিভি ড্রোন ধাওয়া করছে। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, অরল্যানটি মাটিতে পড়ে আছে। আপাত দৃষ্টিতে সেটি এনকাউন্টারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, অরল্যান ড্রোনের দাম এক লাখ ২০ হাজার ডলার। এটি রুশ বাহিনীর মরণঘাতী ড্রোন হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে, ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এফপিভি ড্রোনের দাম মাত্র কয়েক হাজার ডলার।
দেখা গেছে, একটি বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন সরাসরি নিচের ড্রোনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যেমন, ইউক্রেনীয় ম্যাভিক-৩ ড্রোন ওপর থেকে রুশ ড্রোনের ওপর ছিটকে পড়ছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ছয়টি ড্রোনহান্টার এফ৭০০ পেয়েছে। এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পরিচালিত, যা মধ্য আকাশে লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করতে পারে। ফুটেজে দেখা গেছে, এই প্রযুক্তিটি অরল্যান ড্রোন এবং ইরানের শাহেদ ড্রোনকে ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ড্রোন ইউক্রেনীয় অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য রাশিয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।
গবেষণা সংস্থা সায়েন্টিফিক আমেরিকার তথ্য অনুসারে, ড্রোনহান্টার এফ৭০০ ইউক্রেনে ব্যবহার করা হচ্ছে ২০২২ সালের মে থেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।