জুমবাংলা ডেস্ক : রাশিয়া থেকে অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেশে নিয়োগ দেওয়া এজেন্টদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সাইটের সঙ্গে যুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. রেজাউল করিম (৩১), মো. সৈকত রহমান (৩০), মো. সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো. তৌহিদ হোসেন (২৫) ও মো. জাকির হোসেন (৩৪)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১টি সিম, চারটি ল্যাপটপ, সাতটি ডেস্কটপ কম্পিউটার, দুটি ট্যাব এবং নগদ প্রায় চার লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিংকালে অনলাইন প্লাটফর্ম মেল বেট, ওয়ান এক্স বেট এবং বেট ওইনার নামের বেটিং সাইটগুলো নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে যে, সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে।
পরে এই সাইটগুলোর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অ্যানালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি টিম গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্টরা এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।
গ্রেপ্তার রেজাউল করিম তার বাসায় সাতটি কম্পিউটার ও চারটি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মতো এমএফএস এজেন্ট। গ্রেপ্তার নাজমুল ও তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়া সংশ্লিষ্ট কাজগুলো নির্বিঘ্নে করতে পারে।
সিআইডির মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন, তিনি মূলত এই সাইটগুলোর বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান। এই দুইজন এবং সৈকত ও রেজাউলের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে। এরপর প্রতিমাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটি ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে থাকে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।