আর রাজী: গত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরে বাংলাদেশের লোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে পরিবর্তন বড় করে চোখে পড়েছে, তা হচ্ছে বাংলাভাষার পতন।
অধিকাংশ শিক্ষক বাংলাভাষা ঠিক-ঠাক জানেন- এর প্রমাণ পাওয়া কঠিন। অনুমান করি, তারা বাংলাটা ঠিকঠাক জানেন না বলেই বাংলা ব্যবহারে তাদের উৎসাহ অত্যন্ত লঘু।
আর একটা অনুমান আছে, অধিকাংশ শিক্ষক ইংরেজি ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহী হওয়ার কারণ অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি জানেন না। শিক্ষার্থীদের এই ইংরেজি-না-জানার কারণে শিক্ষকরা নিজেদের বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা ঢেকে রাখাতে পারেন মান-সম্মান না হারিয়েই।
আরও অনুমান করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ব্যবহারের আর একটি “উপকার” শিক্ষকরা বুঝে নিয়েছেন, তা হচ্ছে, অনুচ্চ-শিক্ষিত লোক-বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা নিতে ও/বা মানসম্মান কামাইতে যেহেতু বিদেশে যেতেই হবে, সেহেতু ইংরেজি ব্যবহারের সাহস তৈরি হওয়া জরুরি। আর সেই সাহস-সঞ্চয়ের জন্য ইংরেজি চর্চার মোক্ষম ক্ষেত্র হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি-অবুঝ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো সবচে সহজ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চার ফলে এইসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ দিয়ে যারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও পড়াতে যাচ্ছেন- তাদের অধিকাংশের বাংলা ভাষাজ্ঞান কার্যকারণ সূত্রেই দুর্বল। ফলত আমাদের শিশুরা তাদের কাছ থেকে বাংলাভাষা শিখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এই শিশুরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হাজির হচ্ছেন তখন একদিকে থাকছেন টুটাফাটা ইংরেজি চর্চাকারী শিক্ষক আর অন্য দিকে ইংরেজি না জানা, টুটাফাটা বাংলা জানা শিক্ষার্থী।
সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর ভাষা বাংলা, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা বাংলা অথচ তাদেরই টাকায়, তাদেরই “শিক্ষা দেওয়ার” ভাষা ইংরেজি! এই বিকট বুদ্ধি নিয়েই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে। ফলে পুরো দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থাই অসুস্থ ও অকার্যকর হয়ে উঠেছে।
এই পতন থেকে উঠে দাঁড়াতে শিক্ষকদের আগ্রহ থাকার বাস্তব সম্মত কারণ নাই। শিক্ষার্থীরা যদি বুঝতে পারেন, ইংরেজি ভাষাকে কীভাবে তাদের পিছিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন শিক্ষকরা, কীভাবে বৈষম্যকে শাশ্বত করায় এই শিক্ষকরা কাজ করে চলেছেন তাহলেই কেবল পরিস্থিতি বদলাতে পারে। শিক্ষার্থীরাই পারেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাংলা ব্যবহারে বাধ্য করতে।
লেখক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরর শিক্ষক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।