বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার আগে করতে হয় ক্যাপচা সমাধান। ব্যবহারকারী রোবট না মানুষ, এটা জানতে চায় ওয়েবমাস্টার। বেশ কিছু অ্যাপ ও ওয়েবসেবা পেতেও করতে হয় ক্যাপচা সমাধান। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে এটি খুবই পরিচিত।
স্প্যাম ও বটের আক্রমণ ঠেকাতে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারকারী মানুষ কি না তা বিভিন্ন উপায়ে যাচাই করে এটি। কখনো ছবি মেলাতে হয়, আবার কখনো করতে হয় ছবিতে থাকা লেখা টাইপ।
ক্যাপচার ব্যবহার শুরু ২০০৩ সালে।
সত্যিকার ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারে তৈরি ভুয়া প্রোফাইল আলাদা করার এই সিস্টেম বানিয়েছিলেন লুই ভন আহন। ক্যাপচা প্রযুক্তি ২০০৯ সালে কিনে নেয় গুগল। তবে ক্রমেই মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ক্যাপচা।
২০২৩ সালে গুগলের রিক্যাপচার প্রাইভেসি সম্পর্কে চালানো এক গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল।
তাদের মতে, রিক্যাপচা এখন আগের চেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। তাঁরা কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করেছেন তার হিস্ট্রি, ডিসপ্লের রেজল্যুশন থেকে শুরু করে এমনকি তাঁরা মাউস কিভাবে নাড়ছেন—এমন সব তথ্য সংগ্রহ করে রিক্যাপচা। এসব তথ্য ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল তৈরির কাজ করে গুগল, যা ব্যবহৃত হয় বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য। অনেক সময়ই ব্যবহারকারীরা বলেন, ঠিক তাঁদের মনের মতো পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন যেন জাদুর মতো হাজির হয়ে যায়। রিক্যাপচার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাঁদের ব্রাউজিং হিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায় গুগল, তাই বিজ্ঞাপনগুলো তাঁদের পছন্দের সঙ্গে এতটা মিলে যায়।
গবেষকরা হিসাব করেছেন, গত ১৩ বছরে ৮৮৮ বিলিয়ন ডলার [বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি কোটি টাকা] মূল্যের ট্র্যাকিং কুকিজ সংগ্রহ করেছে গুগল। পাশাপাশি চাইলে ক্যাপচায় ব্যবহৃত লেবেলযুক্ত ছবির ডেটা ৩২.২ মিলিয়ন ডলার [তিন লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা] মূল্যে বিক্রি করতে পারে এই প্রতিষ্ঠান। এই ডেটা এআই মডেলগুলো আরো উন্নত করতে এবং বিজ্ঞাপনগুলো সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গবেষকরা হিসাব করেছেন, রিক্যাপচা থেকে গত ১৩ বছরে ৮৮৮ বিলিয়ন ডলার [এক কোটি কোটি টাকা] মূল্যের ট্র্যাকিং কুকিজ সংগ্রহ করেছে গুগল। পাশাপাশি ক্যাপচায় ব্যবহৃত লেবেলযুক্ত ছবির ডেটার মূল্যও ৩২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার [তিন লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা]
প্রায় তিন হাজার ৬০০ ব্যক্তির ওপর ১৩ মাস ধরে জরিপ চালিয়ে করা হয়েছে এই গবেষণা। গবেষণাটিতে তাঁদের রিক্যাপচা ব্যবহারের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রিক্যাপচা আজ অনেকটাই অকার্যকর। বটগুলো এখন সহজে রিক্যাপচাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারছে। এআইয়ের যুগে এই টুল আর আটকাতে পারছে না বট হামলা।
চেকবক্সের তূলনায় ছবিভিত্তিক ক্যাপচা ছয় গুণ বেশি সময় নেয়, অথচ এর কার্যকারিতা প্রায় একই। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫১ হাজারেরও বেশি রিক্যাপচা সমাধান করেছেন ব্যবহারকারীরা। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ৮১ কোটি ৯০ লাখ ঘণ্টা সময়। মার্কিন কর্মঘণ্টার হিসাব অনুযায়ী, এ সময় অপচয় হয়েছে ছয় বিলিয়ন ডলার [৭২ হাজার কোটি টাকা]। পাশাপাশি বিদ্যুৎ অপচয় হয়েছে ৭৫ লাখ কিলোওয়াট-ঘণ্টা এবং ৭৫ লাখ পাউন্ড কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়েছে।
অকার্যকর প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ইন্টারনেটে রিক্যাপচার ব্যবহার হারহামেশাই হচ্ছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অনেকেই ক্যাপচা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। আরো উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, বটগুলো এখন এই ক্যাপচা সমাধানে মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং আরো নির্ভুল, যা ক্যাপচা টুলের কার্যকারিতা নিয়ে আরো সন্দেহ তৈরি করে।
ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়াই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি এর আগেও ফরাসি একটি তদন্তে উঠে এসেছে। ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য যথাযথ সম্মতি বা প্রকাশ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সার্ভারে প্রেরণ করা হচ্ছে। এই তথ্য চুরি কোনো ত্রুটি নয়; ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার প্রতি ব্যাপক অবহেলার লক্ষণ।
ব্যবহারকারীদের অজান্তেই রিক্যাপচার মাধ্যমে হাতের লেখা ডিজিটাইজ করার কাজও করেছে গুগল। হাতে লেখা পুরোনো বই অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন বা ওসিআরের মাধ্যমে ডিজিটাইজ করা অত্যন্ত কঠিন। সে সমস্যা সমাধানে গুগল সেসব শব্দ রিক্যাপচার মধ্যে বসাতে শুরু করে। এভাবেই প্রতিদিন কয়েক কোটি মানুষ গুগলকে সাহায্য করেছেন হাতে লেখা বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরিতে। হাতের লেখার পাশাপাশি অস্কষ্ট ছাপা অক্ষর ডিজিটাইজেও রিক্যাপচা ব্যবহার করেছে গুগল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।