জুমবাংলা ডেস্ক : বরগুনায় রিফাত শরীফ হ*ত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগে ও পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি মোট ১৩ বার ফোনালাপ করেন বলে হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে। মিন্নির জামিন বিষয়ে শুনানিকালে বুধবার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে ফোনালাপের এ তথ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
এ সময় আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মশিউর রহমান ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।
শুনানির শুরুতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে এ মামলায় শুনানি করছি। আজকে শুধু এ কথাই বলবো, মিন্নিকে গ্রেফতারের পর কোর্টে হাজির করার পর তার পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আদালত তার কাছে জানতে চাইলে তিনি (মিন্নি) জানান, ওই হ*ত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পুলিশ এ মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।’
এরপর মিন্নির আইনজীবী হ*ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভাইরাল হওয়া সিসি ফুটেজের ১১ খণ্ডের ডিস্ক আদালতে দাখিল করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘এইসব সিসি ক্যামেরা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় ভিডিওগুলো কীভাবে বাইরে প্রকাশ হলো? এটাও কিন্তু একটা অপরাধ।’ পরে এ আইনজীবী ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজও আদালতে দাখিল করেন।
এ সময় মিন্নির আইনজীবী বলেন, ‘মিন্নি বিধবা এবং একজন ১৯ বছর বয়সী নারী। তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছি, কিন্তু আমরা এখনও তা হাতে পাইনি।’
একপর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর) হুমায়ন কবিরের কাছে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি। আজ বিচারিক আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। কিন্তু আজ মহামান্য আদালতে (হাইকোর্ট) থাকতে হয়েছে বিধায় প্রতিবেদন দাখিল করতে পারিনি; এখানে (হাইকোর্টে) আছি।’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘সব মহামান্য আদালতেরই দোষ? এই মামলায় কি নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করেছিলেন?’
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি গত ৩০ মে বরগুনায় নিযুক্ত হই। এরপর অন্য মামলায় নয়ন বন্ডকে আসামি হিসেবে পাই। এরপর রিফাত হ*ত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে নয়নকে গ্রেফতার করতে যাই। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারিনি। পাল্টাপাল্টি ব*ন্ধুকযু*দ্ধে সে মারা যায়।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘নয়নের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক ছিল এটা সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছে। এই মামলাটি অনেক স্পর্শকাতর এবং জনমনে বেশ আগ্রহ কাজ করছে।’
আদালতের এক প্রশ্নের জবাবে মামলার প্রতিবেদন তুলে ধরে এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘কলেজের সামনে ওই ঘটনার আগে নয়নকে মিন্নি আটবার ফোন করে কথা বলেছিল। আর ঘটনার পর পাঁচবার ফোন করে কথা বলে। মোবাইল অরিজিনেটেড কল এবং মোবাইল টার্মিনেটেড কল লিস্টে তা-ই উঠে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই রিফাত হাসাপাতালে গেলেও কিন্তু মিন্নি সেখানে ছিল। এসব কি তাকে নিষ্পাপ প্রমাণ করে?’
আদালত বলেন, ‘এখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত আছেন। তারা ফোনের কথোপকথন তুলে দেখতে পারেন, কী কী কথা হয়েছে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তখন বলেন, ‘সে (মিন্নি) এই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী। তার বয়স ১৯ এবং সে নারী, এসব বলে জামিনের কোনও সুযোগ নেই। তাকে জামিন না দিয়ে মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করা হোক।’
জবাবে মিন্নির আইনজীবী বলেন, ‘একটি মানুষের ফোনে প্রতিদিন অনেক কল আসতে পারে।’ এ সময় একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় তথ্য আছে, এই ঘটনার আগে ৭৭ বার পুলিশের সঙ্গে নয়নের কথা হয়েছে। বরগুনা থানার এসআই আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আপনারা মিন্নিকে জামিন দিন, প্রয়োজনে আমি তার গ্যারান্টার থাকবো।’
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘নয়ন তার একটি পরিত্যক্ত মোটরসাইকেল আটকের বিষয়ে ওই এসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতো।’
এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তার জামিনের পক্ষে এখানে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তাই তাকে জামিন দিলে তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ হবে না। তার জামিনের সঙ্গে তদন্তের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তাই জামিন দেওয়া আপনাদের বিবেচনাধীন বিষয়।’
এরপর আদালত মিন্নির জামিনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টায় আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।