বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সাশ্রয়ী দামে আধুনিক স্মার্টফোন ব্যবহারের এক দারুণ উপায় হলো রিফারবিশড ফোন। তবে এই সুবিধাটি নিতে গিয়ে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ফলে হয় অর্থের ক্ষতি, নয়তো প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আপনি যদি প্রথমবারের মতো রিফারবিশড ফোন কিনতে যাচ্ছেন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য একেবারে অপরিহার্য। এখানে এমন ৬টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো জানা না থাকলে আপনি ভুল পছন্দ করে ফেলতে পারেন।
রিফারবিশড ফোন কেনার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন
রিফারবিশড ফোন মূলত এমন একটি ডিভাইস যা কারখানা বা বিক্রেতা কর্তৃক মেরামত বা যাচাই-বাছাই করে পুনরায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এর মানে এই নয় যে ফোনটি খারাপ বা নিম্নমানের। বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটি নতুন ফোনের সমমানের পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম হয়। তবে কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া খুব জরুরি।
Table of Contents
১. যাচাই করুন ফোনটি সত্যিই রিফারবিশড কি না
বাজারে অনেক সময় কিছু পুরনো বা ইউজড ফোনকে রিফারবিশড বলে বিক্রি করা হয়। তবে রিফারবিশড ফোনের সঙ্গে ইউজড ফোনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো- রিফারবিশড ফোনে পেশাদার মেরামত এবং পরীক্ষিত মান থাকে। তাই ফোনটি অফিসিয়ালভাবে রিফারবিশড কিনা তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। অ্যাপল, স্যামসাং, এবং অনারসহ অনেক বড় ব্র্যান্ড তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রিফারবিশড ফোনের তালিকা দিয়ে থাকে।
২. ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন পলিসি পরীক্ষা করুন
রিফারবিশড ফোন কেনার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ওয়ারেন্টি সুবিধা। বেশিরভাগ ব্র্যান্ড রিফারবিশড ফোনে সীমিত ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে, সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর। এছাড়াও, রিটার্ন পলিসি কেমন সেটিও জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ ফোনটি আপনার চাহিদা পূরণ না করলে যেন সহজেই ফেরত দিতে পারেন।
৩. ফোনের অবস্থা ও কনফিগারেশন ভালোভাবে মিলিয়ে দেখুন
রিফারবিশড হলেও ফোনটির ফিজিক্যাল কন্ডিশন ও স্পেসিফিকেশন ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি। স্ক্র্যাচ, ডিসপ্লে সমস্যা বা ব্যাটারি ড্রেইনের মতো সমস্যা থাকলে সেটি অনায়াসে ধরা পড়ে না। তাই ফোন হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন।
৪. নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা থেকে কিনুন
অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা লোকাল দোকান থেকে রিফারবিশড ফোন কেনার সময় অবশ্যই বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন। Amazon Renewed, Apple Certified Refurbished, এবং Flipkart Assured Refurbished—এগুলো কিছু পরিচিত বিশ্বস্ত উৎস। বাংলাদেশে এরকম নির্ভরযোগ্য রিসেলার যেমন Pickaboo, Star Tech অথবা Gadget & Gear-ও একটি ভালো উৎস হতে পারে।
৫. ফোনের ব্যাটারি ও সফটওয়্যার আপডেট সম্বন্ধে জেনে নিন
রিফারবিশড ফোনের আরেকটি প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো ব্যাটারির ক্ষমতা। অনেক সময় পুরনো ব্যাটারি থাকায় দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যায়। তাই ব্যাটারির হেলথ রিপোর্ট যাচাই করে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি সফটওয়্যার আপডেট এখনো সাপোর্ট করে কি না সেটাও দেখতে হবে। কারণ পুরনো মডেলের ফোনে নতুন ফিচার বা নিরাপত্তা আপডেট আসতে দেরি হতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৬. দাম তুলনা করে বুঝে শুনে কিনুন
রিফারবিশড ফোন কেনার মূল কারণ হলো অর্থ সাশ্রয়। তবে অনেক সময় বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম চাইতে পারে। তাই বাজার যাচাই করে দাম তুলনা করুন। একই ব্র্যান্ডের নতুন ও রিফারবিশড ফোনের মধ্যে কত পার্থক্য আছে সেটাও বিশ্লেষণ করুন। যদি দাম খুব কাছাকাছি হয়, তাহলে নতুন ফোন কেনাই ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
রিফারবিশড ফোনে বিনিয়োগ: সঠিক সিদ্ধান্ত কীভাবে নেবেন
রিফারবিশড ফোন কেনা অনেকটা স্মার্ট ইনভেস্টমেন্টের মতো, তবে সেটি তখনই লাভজনক হবে যখন আপনি সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। নিচের দিকনির্দেশনাগুলো আপনাকে সহায়তা করবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে:
- ব্র্যান্ড রিকগনিশন: নামকরা ব্র্যান্ড থেকে কিনলে রিসেল ভ্যালু এবং মানের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
- ফোনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ: আপনি ফোনটি কেন কিনছেন তা আগে ভাবুন—কাজের জন্য, গেমিং, নাকি শুধুই যোগাযোগের জন্য।
- সার্ভিস সেন্টার অ্যাক্সেস: রিফারবিশড হলেও ফোনটির সার্ভিস সেন্টার কাছাকাছি আছে কিনা তা দেখে নিন।
- সঠিক সময়ে কেনা: অনেক সময় ফেস্টিভ সিজনে বা অফার চলাকালীন রিফারবিশড ফোনে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়।
এই দিকগুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি একটি ভালো মানের রিফারবিশড ফোন পেতে পারেন যা আপনাকে নতুন ফোনের মত অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম।
আপনি যদি প্রযুক্তিতে আপডেট থাকতে চান এবং কম দামে মানসম্পন্ন স্মার্টফোন ব্যবহার করতে আগ্রহী হন, তবে সঠিকভাবে যাচাই করে একটি রিফারবিশড ফোন কেনাই হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ।
জেনে রাখুন-
রিফারবিশড ফোন কি একদম নতুন ফোনের মত কাজ করে?
সাধারণত, রিফারবিশড ফোনগুলো বিশেষজ্ঞদের দ্বারা যাচাই ও মেরামত করা হয়। তাই এটি অনেক ক্ষেত্রেই নতুন ফোনের মত পারফর্ম করে। তবে এটি নির্ভর করে বিক্রেতার মান এবং ফোনের পূর্ব অবস্থা অনুযায়ী।
রিফারবিশড ফোনের গ্যারান্টি থাকে কি?
হ্যাঁ, বেশিরভাগ বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড ও রিসেলার রিফারবিশড ফোনে ৬ মাস থেকে ১ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। তবে এটি আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া উচিত।
রিফারবিশড ফোনে কি সফটওয়্যার আপডেট আসে?
হ্যাঁ, যদি ফোনটি আনঅকড এবং অফিশিয়াল সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে, তাহলে সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায়। তবে পুরনো মডেলের ক্ষেত্রে আপডেট কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
রিফারবিশড ফোন কেনার জন্য কোন ওয়েবসাইট বা দোকান ভালো?
বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট যেমন Amazon Renewed, Apple Refurbished Store, এবং বাংলাদেশের Pickaboo, Star Tech এবং Gadget & Gear ভালো উৎস হতে পারে।
রিফারবিশড ফোনে কোন ঝুঁকি থাকে?
যদি যাচাই না করে অজানা বা অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কেনা হয়, তবে হিডেন ড্যামেজ, ব্যাটারি সমস্যা বা সফটওয়্যার বাগের ঝুঁকি থাকে।
রিফারবিশড ফোন কি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন?
না, রিফারবিশড ফোন হলো এমন ফোন যা রিটার্ন হওয়ার পর যাচাই-বাছাই ও মেরামত করে পুনরায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এটি সেকেন্ড হ্যান্ডের মতো নয়, বরং মান পরীক্ষিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।