বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: নতুন স্মার্টফোন বাজারে আসা মানেই প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞাপন এবং ফিচার নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু এই দৌড়ে অনেক সময় গ্রাহকদের ঠকানোর ঘটনাও ঘটে। রিয়েলমি সি৭৫ এর ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক তেমনই — ক্যামেরার সংখ্যাকে ঘিরে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক, যা এখন চীনা ফোনগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে।
সি৭৫ ক্যামেরা সংক্রান্ত ইস্যুতে রিয়েলমির বক্তব্য
রিয়েলমি অফিসিয়ালি বা আনঅফিসিয়ালি কখনোই কোথাও উল্লেখ করেনি যে সি৭৫ স্মার্টফোনে তিনটি রিয়ার ক্যামেরা আছে। বরং, রিয়েলমি প্রেস রিলিজ, ভিডিও কনটেন্ট, প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য মাধ্যমে বারবার উল্লেখ করেছে যে ফোনটিতে একটি ৫০ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা রয়েছে ও একটি ফ্লিকার লেন্স রয়েছে। ফোনটির ব্যাক প্যানেলে দৃশ্যমান তিনটি ক্যামেরা বাম্পের মধ্যে একটি মূল ক্যামেরা লেন্সের জন্য, একটি ফ্লিকার লেন্সের জন্য এবং একটি শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ক্যামেরা সংক্রান্ত এসব তথ্য রিয়েলমির সেলস পয়েন্ট থেকেও গ্রাহকদের স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে/ হচ্ছে। ফ্লিকার লেন্স আশেপাশের আলোতে ফ্লিকারের ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত করে এবং ছবি তোলার সময় ফ্লিকার কমাতে সহায়তা করে। এটি মূল ক্যামেরা লেন্সকে এলইডি লাইটবক্স বা ডিসপ্লের মতো আলোর উৎস নিয়ন্ত্রণ করে ভালো মানের ছবি তুলতে সাহায্য করে। বিউটিফিকেশন বাম্পটি মূলত ডাবল টাচ-এ কিউআর কোড স্ক্যান করতে ব্যবহার করা হয়।
Table of Contents
প্রতারণা না কৌশলী ডিজাইন? রিয়েলমির বক্তব্য
রিয়েলমি সম্প্রতি তাদের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, তারা কখনোই বলেনি যে C75 ফোনে তিনটি ক্যামেরা রয়েছে। তাদের মতে, ফোনটিতে রয়েছে একটি ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরা, একটি ফ্লিকার লেন্স (যা মূলত ফ্লিকারের আলো বিশ্লেষণ করে), এবং একটি ডামি লেন্স যা শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত।
তাদের দাবি, ফোনের ডিজাইন ভোক্তাদের ক্যামেরার বিষয়ে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং একটি ফিচার রিচ চেহারা দেওয়ার জন্য।
বাস্তবতা: একটি কার্যকর ক্যামেরা, দুইটি অকেজো বাম্প
বিভিন্ন রিভিউ এবং টিয়ারডাউন ভিডিওতে দেখা গেছে যে, ফোনটির পেছনে থাকা তিনটি লেন্সের মধ্যে শুধুমাত্র একটি ক্যামেরা বাস্তবে কাজ করে। বাকি দুটি লেন্স শুধু ডিজাইনের অংশ, যেগুলো আলাদা ফিচার হিসেবে কার্যকর নয়। এর ফলে অনেক ক্রেতা মনে করছেন তারা প্রতারিত হয়েছেন।
বিশেষ করে মোবাইল রিভিউ সাইটগুলো রিয়েলমি C75-কে “one real camera with two dummy bumps” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর চিরাচরিত স্ট্র্যাটেজি?
রিয়েলমির এই ঘটনা কেবল একটি ব্র্যান্ডকে ঘিরে নয়, বরং চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর একটি সাধারণ প্রবণতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। অতীতে হুয়াওয়ে, ইনফিনিক্স, টেকনো, শাওমি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও ক্যামেরা, র্যাম বা ব্যাটারির ফিচার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করার অভিযোগ উঠেছে।
এরা প্রায়শই ফিচার-সমৃদ্ধ ডিজাইন তৈরি করে, কিন্তু ভেতরের কার্যকারিতা ততটা শক্তিশালী নয় — যা অনেক সময় ঠকানোর শামিল।
গ্রাহকদের জন্য সতর্কবার্তা
এই ধরনের ঘটনার কারণে সাধারণ ক্রেতাদের এখন আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং ইউটিউব রিভিউ, টিয়ারডাউন ভিডিও এবং নির্ভরযোগ্য রিভিউ সাইট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ডিজাইন যদি বিভ্রান্তিকর হয়, সেটাও প্রতারণা
রিয়েলমি যতোই দাবি করুক যে তারা প্রযুক্তিগতভাবে সঠিক তথ্য দিয়েছে, ডিজাইনের মাধ্যমে যদি সাধারণ ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হন — তাহলে সেটা স্পষ্টতই “ডিসগাইসড ফ্রড” বা ছদ্ম প্রতারণা। চীনা ব্র্যান্ডগুলোর উচিত এখন আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের আস্থা বজায় থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।