জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হিসেবে রেজাউল করিম মল্লিকের দায়িত্ব থেকে হঠাৎ সরিয়ে দেওয়ার খবরে প্রশাসনিক ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে কেবল প্রশাসনিক কারণই রয়েছে তা নয়, বরং এর সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু আলোচিত ঘটনা ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তও জড়িত। রেজাউল করিম মল্লিক নামটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হলেও সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে তার অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
রেজাউল করিম মল্লিক ১৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অন্যতম। সর্বশেষ তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর তাকে ডিবিপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই অভিজ্ঞ কর্মকর্তা হঠাৎ করে ডিবি প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়, যখন তার অধীনে কিছু ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মডেল মেঘনা আলমকে আটক ও ৩০ দিনের প্রিভেন্টিভ ডিটেনশনে পাঠানোর ঘটনায় সামাজিক ও আইনি অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।
এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয় শনিবার (তারিখ অনুযায়ী), যেখানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক আদেশে রেজাউল করিম মল্লিককে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক স্বার্থে তাকে এই নতুন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রেজাউল করিম মল্লিকের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের অন্যতম প্রেক্ষাপট হিসেবে যে ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে, তা হলো মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা। বুধবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে ডিবি তাকে আটক করে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণ গ্রেফতারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে হয়েছে বলে বিভিন্ন আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ তুলেছে। প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন অর্থাৎ প্রতিরোধমূলক আটক, বাংলাদেশের আইনে একটি বিতর্কিত ধারা, যা সাধারণত তখনই ব্যবহৃত হয় যখন রাষ্ট্র মনে করে কেউ ভবিষ্যতে অপরাধ করতে পারে। অথচ মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা বা অভিযোগ ছাড়াই এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই আটক প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি এবং এটি আইনের অপব্যবহার। এমনটি করা হলে আইনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা হারাবে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তা সম্ভবত রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। Wikipedia অনুযায়ী, প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন সাধারণত ব্যবহার করা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে, কিন্তু এর অপব্যবহার মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে—রেজাউল করিম মল্লিককে সরানোর সিদ্ধান্ত কি কেবলমাত্র প্রশাসনিক, নাকি এর পেছনে রাজনৈতিক চাপও রয়েছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেহেতু প্রায়ই রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে জড়িত হয়ে পড়ে, তাই একে নিছক প্রশাসনিক রদবদল হিসেবে দেখা কিছুটা কঠিন।
যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এটি একটি প্রশাসনিক রোটেশনের অংশ, তবে সময় এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এর পেছনে অন্য কিছু থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে যখন জনপ্রিয় ও আলোচিত একটি মডেলকে আটক করে বিতর্কিত পদ্ধতিতে কারাগারে পাঠানো হয়, তখন তা একটি বড় বার্তা দেয় সমাজকে।
এই পরিস্থিতিতে রেজাউল করিম মল্লিকের ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর প্রশাসনের ভেতরে এবং বাহিরে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক রদবদলের পরবর্তী ধাপেই বোঝা যাবে, তিনি আবার কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে আসতে পারেন কি না।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না। তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত এবং অভিযান পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত, এবং সাইবার অপরাধ মোকাবেলায়ও সাফল্য রয়েছে।
এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের ফলে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে, তা শুধরে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দায়িত্ব অনেক।
FAQs
- রেজাউল করিম মল্লিক কে?
তিনি একজন অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত আছেন। - কেন তাকে ডিবি প্রধানের পদ থেকে সরানো হয়েছে?
মডেল মেঘনা আলমের বিতর্কিত আটক প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। - মেঘনা আলমকে কেন আটক করা হয়?
তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় আটক করা হয়, যদিও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। - রেজাউল করিম মল্লিকের ভবিষ্যৎ পদ কী হতে পারে?
এটি এখনো নিশ্চিত নয়, তবে তিনি পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ফিরে আসতে পারেন। - বিশেষ ক্ষমতা আইন কী?
এটি এমন একটি আইন, যা নিরাপত্তাজনিত কারণে কাউকে আগাম আটক করতে ব্যবহৃত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।