প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে মানুষ। শীতপ্রধান দেশে বরফ সহজলভ্য। তাই তাদের জন্য বিষয়টা বেশ সহজ ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ব্যবহার করা হতো একধরনের লবণ ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। খাদ্যে হলুদের ব্যবহারও করা হয় খাবারকে জীবাণুমুক্ত করে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের তাগিদে। আর খাবার দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ব্যবহৃত হতো নানা রকম মশলা।
এদিকে ১৮৭৪ সালের দিকে যান্ত্রিকভাবে খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি আবিস্কার করেন সুইডেনের বিজ্ঞানী কার্ল লিন্ডে। তবে সেটা ছিল সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় ঘটে। একসময় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ আধুনিক জীবনের এক প্রয়োজনীয় যন্ত্রে পরিণত হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সব্জি, ফলমূল, মাছ-মাংসসহ পচনশীল দ্রব্যাদি সংরক্ষণে রেফ্রিজারেটরের জুড়ি নেই। সাধারণত নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি করে রেফ্রিজারেটরে এসব জিনিস পচন থেকে রক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অতি ক্ষুদ্র জীবাণু ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে খাবার ও অন্যান্য জিনিস পচিয়ে ফেলে। কিন্তু নিম্ন তাপমাত্রায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এসব ব্যাকটেরিয়া। ফলে তাদের বংশবৃদ্ধি থেমে যায়। এ কারণে এসব জীবাণু খাবার পচাতে পারে না।
ফ্রিজের ভেতর ঠান্ডা রাখতে কম্প্রেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রধান উপাদান হচ্ছে কম্প্রেসর, কন্ডেনসার, এক্সপেনসন ভালব এবং ইভাপোরেটর। এ ছাড়া রেফ্রিজারেন্ট বা শীতক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে ঘন কার্বন ডাই-অক্সাইড (ড্রাই আইস) ব্যবহার করা হয়। একসময় রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো ক্ষতিকর সিএফসি (ক্লোরোফ্লুরো কার্বন)।
রেফ্রিজারেটর ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া শেষ হয় কয়েক ধাপে। প্রথমে ফ্রিজের ভেতরের দ্রবাদির তাপ শুষে নিয়ে রেফ্রিজারেন্ট (ড্রাই আইস) বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয় কম্প্রেসরের মাধ্যমে। পরে তা কন্ডেনসারের মাধ্যমে ঠান্ডা এবং তরলে পরিণত করা হয়। এই ঠান্ডা ও তরল রেফ্রিজারেন্ট তাপ ও চাপ কমিয়ে একটি এক্সপেনসন ভালবের মধ্য দিয়ে চালিত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার ঘটার কারণে ফ্রিজের ভেতরের জিনিসের তাপমাত্রা ক্রমে কমতে থাকে। এভাবে ফ্রিজের ভেতরে তাপমাত্রা কম রেখে খাবার সংরক্ষণ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।