জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ওপর দিয়ে সদ্যই বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সোমবার (২৭ মে) দিনব্যাপী তার তাণ্ডবে বেসামাল হয়ে গেছে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন। তীব্র ঝড়ের সঙ্গে ভারী বর্ষণে নিস্ব হয়েছে লাখো মানুষ। প্রাণহানি তেমন না হলেও ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে হাজারো উপকূলবাসীর। ক্ষতি কাটিয়ে নতুন করে কবে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন, এ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় তারা।
সরকারি হিসাব বলছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১৯ জেলার মানুষ। এর মধ্যে ৯ জেলায় প্রাণ গেছে ১৪ জনের। প্রাণহানির এ পরিমাণ দুর্যোগের তীব্রতা তেমন বোঝাতে যথেষ্ট নয়, তবে রেমালের তাণ্ডবের সাক্ষী হয়ে আছে হাজার হাজার বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট। গ্রামীণ সড়ক এবং বেড়িবাঁধ ভেঙে এখনও পানিতে তলিয়ে আছে উপকূলবর্তী শত শত গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে একরের পর একর ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে বিঘার পর বিঘা মাছের ঘের।
সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় একরকম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দুর্যোগকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। হিসাব বলছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিতরণ লাইন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক। আর টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, বিদ্যুৎ না থাকায় ৬৪ জেলার ২২ হাজার মোবাইল সাইট (টাওয়ার) অচল হয়ে পড়েছে, যা মোট সাইটের ৪৮ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়কবলিত অঞ্চলগুলোতে খাবারও নেই অনেকের ঘরে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা সরে গেছেন আগেই, তাদের যৎসামান্য শুকনো খাবারও ফুরিয়ে আসবে দ্রুতই। সবচেয়ে বেশি কষ্টে কাটাচ্ছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সবমিলিয়ে উপকূলে নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়।
সোমবার রেমাল পরবর্তী তাৎক্ষণিক এক বিবৃতি দেয় ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সদ্য বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কবলে পড়ে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের ৮৪ লাখের বেশি মানুষ। ঝুঁকিতে থাকা বিশাল এ জনগোষ্ঠীর ৩২ লাখই শিশু। সদ্য বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট জেলা।
একইদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে জানান, রেমালের আঘাতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো– সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় জিআর হিসেবে ৩ কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার পাঁচশ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।