যখন প্রথম সাহরির আজান ভেসে আসে নিস্তব্ধ ভোরের বাতাসে, হৃদয়ে এক অনন্য প্রশান্তি নামে। কিন্তু এই পবিত্র মাসের ইবাদত-বন্দেগী আর আত্মশুদ্ধির পথে অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক দুর্বলতা, পানিশূন্যতা বা অস্বস্তি। ক্লান্ত শরীরে ইবাদতের আনন্দ ম্লান হয়ে যেতে পারে। ভোররাতে সাহরির সময় পেটভরে খেয়েও দুপুর না হতেই অসহ্য দুর্বলতা, ইফতারের পর পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা – এগুলো কি রোজাদারের নিত্যসঙ্গী? না, একেবারেই নয়! রোজায় শরীর ভালো রাখার উপায় জানা থাকলে এই মাসটিকে শুধু আধ্যাত্মিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও হতে পারে সতেজ, সুস্থ ও প্রাণবন্ত। কিছু সহজবোধ্য ও বিজ্ঞানসম্মত কৌশল মেনে চললেই আপনি এই রমজানেও পাবেন অফুরন্ত এনার্জি, মন ও শরীর দুটোই থাকবে চাঙ্গা।
রোজায় শরীর ভালো রাখার উপায়: সেহরি ও ইফতারের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি
সারাদিনের রোজার শক্তির প্রধান উৎস হলো সেহরি। আর ইফতার দেহকে পুনরুজ্জীবিত করে। এই দুটো সময়ের খাদ্যাভ্যাসই রোজায় সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি।
সেহরি: দিনের জ্বালানির ভাণ্ডার: সেহরি কখনোই হেলাফেলা করা উচিত নয়। অনেকেই রাতের খাবারের মতো ভারী খাবার খান সেহরিতে, যা সারাদিন অস্বস্তির কারণ হয়। আবার কেউ কেউ শুধু পানি বা এক কাপ চা খেয়েই রোজা রাখেন, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেহরি হওয়া চাই পুষ্টিকর, ধীরে হজম হয় এমন খাবারে সমৃদ্ধ। জটিল শর্করা (Complex Carbohydrates) হলো এখানে হিরো। লাল আটার রুটি, ওটস, ব্রাউন রাইস, বার্লি, ডালিয়া – এগুলো ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ায়, রক্তে সুগারের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা ভাব দেয়। ঢাকার জনপ্রিয় পুষ্টিবিদ ডা. তাসনিম আহমেদের মতে, “সেহরির প্লেটে অবশ্যই প্রোটিনের ভালো উৎস (ডিম, ডাল, বাদাম, মাছ বা চিকেন), স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (অ্যাভোকাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল) এবং প্রচুর আঁশযুক্ত শাকসবজি (সবুজ শাক, ব্রোকলি, শসা, টমেটো) রাখুন। এতে সারাদিন শক্তি জোগান নিশ্চিত হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হবে।” এক গ্লাস দুধ বা দইও ভালো অপশন। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবার (সসেজ, নাগেট, প্যাকেটজাত জুস) এড়িয়ে চলুন। এগুলো পানিশূন্যতা বাড়ায় এবং বদহজমের ঝুঁকি বাড়ায়। সাহরির শেষ মুহূর্তে এক গ্লাস পানি পান করুন, কিন্তু একসাথে অনেক পানি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এটি শরীরে শোষিত হয় না এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সাহরির পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট হাঁটুন বা হালকা শরীরচর্চা করুন। এতে হজমে সহায়তা হয়।
- ইফতার: সতর্কতার সাথে পুনরুজ্জীবন: সারাদিনের উপবাসের পর ইফতারে হুড়মুড় করে খেয়ে ফেলার প্রবণতা অনেকেরই থাকে। এই অভ্যাসই গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ। ইফতার শুরু করুন প্রাকৃতিক মিষ্টি ও তরল দিয়ে। খেজুর (অন্তত ১-২টি) হলো আদর্শ স্টার্টার। এটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক করে, শক্তি দেয় এবং পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে যা পানিশূন্যতা রোধে সহায়ক। এরপর এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি বা হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। চিনি ছাড়া তাজা ফলের রস (তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, মাল্টা), ঘরে বানানো লাচ্ছি বা ডাবের পানি পানিশূন্যতা দূর করতে চমৎকার। চটজলদি ইফতার আইটেমের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। বেসনের বা ডালের ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি ইত্যাদি তেলে ডুবিয়ে ভাজা নয়, বরং অল্প তেলে ভাজুন বা বেক করুন। চিড়া-কলা-দই, ওটস হালুয়া, নুডলস স্যুপ, ফলমূলের সালাদ, খিচুড়ি (অতিরিক্ত তেল ছাড়া) – এগুলো হালকা ও সহজপাচ্য বিকল্প। ভাজাপোড়া খাবার পরিমিত পরিমাণে খান এবং প্রচুর সালাদ ও তাজা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। ইফতারের পরপরই ভারী খাবার (পোলাও, বিরিয়ানি, রেজালা) খাবেন না। মাগরিবের নামাজ আদায় করে তারপর রাতের খাবার খান। এতে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে শুরু হয়। খাবার সময় ভালো করে চিবিয়ে খান।
পানিশূন্যতা রোধে কার্যকর কৌশল: রোজায় শরীর ভালো রাখার অপরিহার্য ধাপ
রোজার সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো দেহে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা। গরম আবহাওয়া ও দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়ায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যার লক্ষণ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হওয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য।
ইফতার থেকে সাহরি: ধীরে ধীরে পানি পান: সারাদিনের পানির চাহিদা মেটানোর একমাত্র সময় হলো ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত সময়কাল। এই সময়টাতে কৌশলে পানি পান করতে হবে। একসাথে ৩-৪ গ্লাস পানি পান করা শরীরের জন্য উপকারী নয়। বরং সারারাত ধরে অল্প অল্প করে পানি পান করুন। রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ১-২ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। মোটামুটি ২.৫ থেকে ৩ লিটার (প্রায় ৮-১২ গ্লাস) পানি পান করার লক্ষ্য রাখুন। শুধু পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল যেমন ডাবের পানি, তাজা ফলের রস (চিনি ছাড়া), স্যুপ, হারবাল চা (গ্রিন টি, আদা চা), লেবু-পানি, দইয়ের লাচ্ছি ইত্যাদি পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে। তবে চা, কফি এবং কোমল পানীয় পানিশূন্যতা বাড়ায় বলে এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে পানি বের করে দেয়।
- পানিশূন্যতা বাড়ে এমন খাবার ও কাজ এড়িয়ে চলুন: সাহরিতে অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার (আচার, পাপড়, চিপস, প্রক্রিয়াজাত খাবার), মিষ্টি জাতীয় খাবার (মিষ্টি, চিনিযুক্ত পানীয়) এবং অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়। দিনের বেলায় বিশেষ করে দুপুরের দিকে রোদে বা গরমে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে থাকুন বা ফ্যান/এসির নিচে অবস্থান করুন। কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে দিন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে যানজটে আটকে গরমে থাকলে পানিশূন্যতা তীব্র হতে পারে। হালকা সুতির পোশাক পরুন। গরমকালে রোজা রাখার সময় এই সতর্কতাগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণ দেখা দিলে (মাথাব্যথা, অতিরিক্ত দুর্বলতা) দ্রুত বিশ্রাম নিন এবং ইফতারের পর পর্যাপ্ত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার (ডাবের পানি, কলা, দই) গ্রহণ করুন। গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোজায় পানিশূন্যতা রোধে নাগরিকদের জন্য নিয়মিত নির্দেশনা প্রকাশ করে।
রোজায় শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখার উপায়: ভারসাম্য রক্ষার কৌশল
অনেকের ধারণা রোজায় শরীরচর্চা করা উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম রোজায় শরীর ভালো রাখার উপায় হিসেবে দারুণ কার্যকর। এটি শক্তি বাড়ায়, মেজাজ ভালো রাখে, হজমে সহায়তা করে এবং ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।
- সঠিক সময় বেছে নিন: রোজা অবস্থায় ভারী ব্যায়াম করা বিপজ্জনক হতে পারে। ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ইফতারের ১-২ ঘণ্টা পরে। এ সময় শরীর পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টি পেয়েছে এবং হজম প্রক্রিয়া চলমান। বিকল্প হিসেবে ইফতারের ঠিক আগে খুব হালকা ব্যায়াম (যেমন: হাঁটা, স্ট্রেচিং, প্রাণায়াম) করা যেতে পারে, তবে তা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। সাহরির পরেও হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং উপকারী, তবে ক্লান্তি অনুভব করলে না করাই ভালো। দিনের বেলা, বিশেষ করে দুপুরে কখনোই ব্যায়াম করবেন না।
- ব্যায়ামের ধরন ও সময়সীমা: রোজার সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়ামই যথেষ্ট। ভারী ওজন তোলা, উচ্চ-তীব্রতার ইন্টারভেল ট্রেনিং (HIIT), দীর্ঘ দূরত্ব দৌড়ানো এ সময় উপযুক্ত নয়। এর বদলে ফোকাস করুন:
- হাঁটা: সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। ইফতারের পর ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন পার্কে বা রাস্তায়। ঢাকার রমনা পার্ক বা ধানমন্ডি লেক এসময় হাঁটুয়ালদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়।
- ইয়োগা ও স্ট্রেচিং: মন ও শরীর দুটোকেই শান্ত করে, নমনীয়তা বাড়ায়, স্ট্রেস কমায়। ট্যারার ব্যায়ামও ভালো।
- হালকা কার্ডিও: সাইকেল চালানো (স্টেশনারি বা সাধারণ), সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা (মাত্রাতিরিক্ত নয়), জগিং (হালকা)।
- প্রতিরোধক ব্যায়াম: খুব হালকা ওজন বা শরীরের ওজন ব্যবহার করে (যেমন: পুশ-আপ, স্কোয়াট, লাঞ্জ) – তবে রেপ কম করুন এবং ভারী ওজন এড়িয়ে চলুন।
ব্যায়ামের সময়সীমা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমিয়ে আনুন। ৩০-৪৫ মিনিটই যথেষ্ট। শরীরের সংকেত শুনুন। মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বুক ধড়ফড় অনুভব করলে ব্যায়াম বন্ধ করুন এবং বিশ্রাম নিন।
বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যায় রোজার সমাধান: ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন
যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক/অম্লতা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা, হৃদরোগ, মাইগ্রেন বা গর্ভাবস্থার মতো বিশেষ স্বাস্থ্য অবস্থা রয়েছে, তাদের জন্য রোজায় শরীর ভালো রাখার উপায় কিছুটা ভিন্ন এবং অত্যন্ত সতর্কতামূলক।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই রোজা শুরুর আগে নিজের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। রক্তে সুগারের মাত্রা, ওষুধের ডোজ ও সময়সূচী, খাদ্যাভ্যাস – সবকিছুই সামঞ্জস্য করতে হবে। সাহরিতে জটিল শর্করা ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, লিন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ। ইফতারে সরল শর্করা (খেজুর, ফল) দ্রুত শক্তি দিলেও অতিরিক্ত মিষ্টি ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে। দিনে কয়েকবার (যেমন: দুপুরে, বিকেলে, ইফতারের আগে) ব্লাড সুগার মনিটরিং করা জরুরি। হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা অতিরিক্ত কমে যাওয়া) বা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার (অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া) লক্ষণ দেখা দিলে (অতিরিক্ত ঘাম, কাঁপুনি, ঝাপসা দৃষ্টি, অস্বাভাবিক তৃষ্ণা, বারবার প্রস্রাব) দ্রুত রোজা ভেঙে ফেলতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক অনুমতি দিলে বিশেষ কিছু ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি ইফতার আইডিয়া যেমন চিড়া-দই, ওটস উপমা, সবজি খিচুড়ি উপকারী হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক/অ্যাসিডিটি ও বদহজম প্রতিরোধ: রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুবই সাধারণ। প্রতিরোধের উপায়:
- সাহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত তেল-মসলা, ভাজাপোড়া, মরিচ, ঝাল খাবার, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস, ক্যাফেইন (চা, কফি) এবং অ্যাসিডিক ফল (লেবু, কমলা – তবে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে) এড়িয়ে চলুন।
- ধীরে ধীরে খান, ভালো করে চিবিয়ে খান।
- ইফতারের পরপরই শুয়ে পড়বেন না। অন্তত ১-২ ঘণ্টা হাঁটাচলা করুন বা সোজা হয়ে বসে থাকুন।
- সাহরিতে দই খাওয়া উপকারী। কলা, পেপটো বিসমল (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) সাহায্য করতে পারে।
- মানসিক চাপ কম রাখুন, পর্যাপ্ত ঘুমান।
- উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ: নিয়মিত ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময়মতো (সাহরি ও ইফতারে) সেবন করুন। সাহরিতে অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার (আচার, পাপড়, চিপস, কাচ্চি, প্রক্রিয়াজাত খাবার) এড়িয়ে চলুন। ইফতারে অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও ভাজাপোড়া খাবেন না। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খান। রোজার সময়ও হালকা ব্যায়াম (যেমন হাঁটা) চালিয়ে যান, তবে অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়িয়ে চলুন। রক্তচাপ নিয়মিত মনিটর করুন। অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: রোজায় শরীর ভালো রাখার জন্য সাহরিতে কি কি খাওয়া সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: সাহরিতে জটিল শর্করা (লাল আটা/চাপাতি/পরোটা, ওটস, ডালিয়া, ব্রাউন রাইস), প্রোটিন (ডিম, ডাল, বাদাম, দই, মাছ/চিকেন), স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল) এবং প্রচুর আঁশযুক্ত শাকসবজি (শসা, টমেটো, লাউ, পেঁপে) রাখুন। এগুলো ধীরে হজম হয়, দীর্ঘক্ষণ শক্তি দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। প্রচুর পানি পান করুন (তবে একসাথে নয়)।প্রশ্ন: রোজায় ইফতারে কি খেলে শরীর দুর্বল লাগবে না?
উত্তর: ইফতারে খেজুর ও পানি/লেবুপানি দিয়ে শুরু করুন। এরপর সহজপাচ্য খাবার যেমন চিড়া-কলা-দই, ওটস হালুয়া, স্যুপ, ফলের সালাদ, খিচুড়ি (হালকা) খান। ভাজাপোড়া পরিমিত পরিমাণে খান এবং প্রচুর তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে খান, ভালো করে চিবিয়ে খান। একসাথে অতিভোজন করবেন না। ইফতারের পর হালকা হাঁটাচলা করুন।প্রশ্ন: ডায়াবেটিস থাকলে রোজা রাখা যাবে কি? কী কী সতর্কতা নেব?
উত্তর: ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারেন, তবে চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষে এবং কঠোর নিয়ম মেনে। রোজা শুরুর আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ/ইনসুলিনের ডোজ ও সময়সূচী ঠিক করতে হবে। সাহরিতে জটিল শর্করা ও আঁশ, লিন প্রোটিন খান। ইফতারে মিষ্টি ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। দিনে কয়েকবার ব্লাড সুগার মাপুন। হাইপো বা হাইপার গ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই রোজা ভেঙে ফেলুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।প্রশ্ন: রোজায় পানি কম পান করলে কী সমস্যা হতে পারে? পানিশূন্যতা দূর করার সহজ উপায় কি?
উত্তর: রোজায় পানি কম পান করলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়। এর লক্ষণ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হওয়া। দূর করতে ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত সময়ে অল্প অল্প করে মোট ২.৫-৩ লিটার পানি ও অন্যান্য তরল (ডাবের পানি, তাজা ফলের রস – চিনি ছাড়া, স্যুপ, দইয়ের লাচ্ছি) পান করুন। সাহরিতে অতিরিক্ত লবণাক্ত ও মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। দিনে রোদ ও গরমে বের হওয়া কমিয়ে দিন।প্রশ্ন: রোজায় গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে কী করব?
উত্তর: সাহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত তেল-মসলা, ভাজাপোড়া, ঝাল খাবার, কোমল পানীয়, ক্যাফেইন (চা, কফি) এবং অ্যাসিডিক ফল কম খান। ধীরে ধীরে খান, ভালো করে চিবিয়ে খান। ইফতারের পরপরই শুয়ে পড়বেন না, হাঁটাচলা করুন। সাহরিতে দই খান। কলা ও পেপটো বিসমল (চিকিৎসকের পরামর্শে) উপকারী হতে পারে। মানসিক চাপ কম রাখুন।- প্রশ্ন: রোজায় ব্যায়াম করা কি উচিত? করলে কখন এবং কী ধরনের ব্যায়াম করব?
উত্তর: হ্যাঁ, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম রোজায় করা যায় এবং উপকারী। সবচেয়ে ভালো সময় ইফতারের ১-২ ঘণ্টা পরে। বিকল্পভাবে ইফতারের ঠিক আগে খুব হালকা স্ট্রেচিং বা হাঁটা যেতে পারে। ব্যায়ামের ধরন হতে পারে হাঁটা (৩০-৪৫ মিনিট), ইয়োগা, স্ট্রেচিং, হালকা কার্ডিও (স্টেশনারি বাইক, হালকা জগিং) বা খুব হালকা প্রতিরোধক ব্যায়াম (শরীরের ওজন দিয়ে)। ভারী ব্যায়াম, দৌড় বা উচ্চ তীব্রতার ওয়ার্কআউট এড়িয়ে চলুন। শরীরের সংকেত শুনুন, ক্লান্ত লাগলে বিশ্রাম নিন।
⚠️ Disclaimer: এই আর্টিকেলে প্রদত্ত তথ্য সাধারণ স্বাস্থ্য পরামর্শের উদ্দেশ্যে লেখা। এটি কোনও চিকিৎসক প্রদত্ত পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শ, রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, গর্ভাবস্থা বা অন্য কোনও গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের রমজানে রোজা রাখার আগে অবশ্যই নিজস্ব চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। রোজা রাখার সময় কোনও শারীরিক সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
রোজায় শরীর ভালো রাখার উপায় জানা এবং তা প্রয়োগ করার মধ্যেই নিহিত আছে আপনার সতেজ, প্রাণবন্ত ও ইবাদতমুখী রমজানের চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, এই পবিত্র মাস শারীরিক কষ্ট সহ্য করার জন্য নয়, বরং আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য। সাহরি ও ইফতারের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার যোগ করুন, সারারাত ধরে অল্প অল্প করে পানি পান করুন, হালকা শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখুন এবং বিশেষ শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। এই ছোট ছোট সচেতন পদক্ষেপই আপনাকে দীর্ঘ সময়ের রোজায়ও এনার্জেটিক, ফোকাসড ও সুস্থ রাখতে পারে। এই রমজান, নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন, ইবাদতে মন দিন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। শেয়ার করুন এই গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলো আপনার প্রিয়জনদের সাথে – যাতে সবার রমজান হয় সুস্থ ও সুন্দর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।