রোবটিক সার্জারির ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁরা এমন একটি রোবট তৈরি করেছেন, যা অভিজ্ঞ শল্যচিকিৎসকদের কাজ পর্যবেক্ষণ করে জটিল অস্ত্রোপচার সম্পাদনে দক্ষ হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা দাবি করছেন, দক্ষতার দিক থেকে এই রোবট এখন মানব সার্জনের সমতায় পৌঁছেছে।
সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত রোবট লার্নিং সম্মেলনে গবেষকেরা জানান, দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম রোবটকে ‘ইমিটেশন লার্নিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে সুচের ব্যবহার ও পরিচালনা, শরীরের টিস্যু উত্তোলন এবং সেলাই করার মতো জটিল কাজ রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে পারে। গবেষকদের মতে, এই পদ্ধতি রোবটিক সার্জারিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, এতে প্রতিটি ধাপ আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তা নেই।
গবেষণার প্রধান ও জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যাক্সেল ক্রিগার বলেন, ‘মডেলটি আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর। আমরা শুধু ক্যামেরার ইনপুট সরবরাহ করি, আর এটি সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় রোবোটিক মুভমেন্ট নির্ধারণ করে। এমনকি এটি এমন কাজও করতে পারে, যা আমরা সরাসরি শেখাইনি। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোবট সুচ ফেলে দেয়, এটি নিজেই তা তুলে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।’
বর্তমানে রোবটিক বা রোবটসহায়ক সার্জারি চিকিৎসকদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে রোবট নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি ভুল সংশোধনের মতো জটিল কাজও এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে সক্ষম। গবেষণা দলের মতে, এই রোবট প্রশিক্ষণের পদ্ধতি অনেকটাই লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল বা চ্যাটজিপিটি তৈরির মতো। তবে এখানে শব্দ বা ছবির বদলে সার্জারির সময় রোবটের হাতে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে। এই ভিডিওগুলোর মাধ্যমে রোবট বিভিন্ন কাজ শেখার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
গবেষক দলের সদস্য জিও উং ব্রায়ান কিম বলেন, রোবটটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে চিকিৎসকেরা এর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘বাঁ দিকে যাও’, ‘ডান দিকে যাও’ বা ‘এই কাজ করো’—এমন নির্দেশনা রোবট সহজেই বুঝতে পারে।
যদিও এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এখনো পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। সামান্য একটি ভুলের পরিণতিও হতে পারে মারাত্মক। তাই এই প্রযুক্তি চিকিৎসকদের পুরোপুরি বিকল্প হয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এ ছাড়া প্রযুক্তিটির নির্ভুলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।