৭ নভেম্বর, ২০২৪। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সেদিন একটা নিলাম হয়। ছবি বিক্রির নিলাম। নিলাম মানে একটা নির্দিষ্ট বস্তুর কেনার জন্য অনেক মানুষ দাম বলবেন। যিনি সবচেয়ে বেশি টাকা দেবেন, তিনিই বস্তুটা কিনতে পারবেন। এমনই এক নিলামে বিক্রি হয় গণিতবিদ অ্যালান টুরিংয়ের একটা পোট্রেট। তবে এটা প্রচলিত ধারার কোনো পোট্রেট ছিল না। পোট্রেটটা এঁকেছিল একটা রোবট। নাম আই-ডা। এটাই বিশ্বের প্রথম রোবটের আঁকা ছবির নিলাম। সে জন্য দামও উঠেছে চড়া। ৭ লাখ ৮৯ হাজার স্টারলিং পাউন্ড! বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি ৯৩ লাখের মতো।
আই-ডা নামে হিউম্যানয়েড রোবটটি তৈরি করেছেন এইডেন মিলার নামে এক আর্ট গ্যালারির মালিক। মানুষের মতো দেখতে রোবটকে বলা হয় হিউম্যানয়েড রোবট। আই-ডার নাম রাখা হয়েছে আরেক ইংরেজ গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেসের নামানুসারে। ১৯ শতকের এই নারী গণিতিবিদকে বলা হয় ইতিহাসের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার।
তিনি বলেছিলেন, ‘কম্পিউটার শুধু হিসাবের যন্ত্র নয়, আরও বেশি কিছু।’ তাঁর সে কথাই যেন বাস্তবে প্রমাণ করে দিল তাঁর নামানুসারে নাম রাখা প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট আই-ডা। রোবটটি এখন মিলিয়ন ডলারের মালিক। অবশ্য সম্মানটা রোবটকে দিয়ে সম্মানীটা (টাকা) হয়তো নিয়ে নেবেন মিলার!
যাহোক, আই-ডা নিজের রোবটিক হাত ব্যবহার করে এই ছবিটা এঁকেছে। কীভাবে এঁকেছে, তা একটু সহজ করে বলা যাক; যদিও বাস্তবে প্রক্রিয়াটা এত সহজ নয় মোটেও। আই-ডার চোখের জায়গায় বসানো আছে ক্যামেরা। এ ক্যামেরার সাহায্যে সামনের সবকিছু দেখতে পায় রোবটটি। আসলে সামনের জিনিসগুলোর ছবি তোলে ক্যামেরার সাহায্যে। সে ছবি গিয়ে জমা হয় একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামে। এই প্রোগ্রাম আই-ডার দেওয়া ছবি প্রক্রিয়াজাত করে ওর হাতকে বলে দেয় কোথায় পেন্সিল বা তুলি রাখতে হবে। এভাবে ধাপে ধাপে আই-ডা একটা ছবি আঁকে।
এখন ভাবতে পারেন, অ্যালান টুরিংয়ের ছবিটাই কেন আঁকা হলো? মিলার তো প্রথমে নিজের ছবিটাই আঁকাতে পারতেন। টুরিংয়ের ছবি বেছে নেওয়ার কারণ, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ গণিতবিদ, কম্পিউটারবিজ্ঞানী ও কোডব্রেকার। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়ে নিশ্চয়ই দেখেছেন, মাঝেমধ্যে অদ্ভুত একধরনের পরীক্ষা নেয়। এটাকে বলা হয় ‘ক্যাপচা’। এতে ইংরেজি ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, গাণিতিক অঙ্কসহ নানারকম চিহ্ন লেখা থাকে আঁকাবাঁকা, এলোমেলো করে।
এই চিহ্নগুলো চিনে চিনে একটা খালি ঘরে সঠিকভাবে লিখতে হয়। এ পরীক্ষা করে ওয়েবসাইট দেখে ব্যবহারকারী মানুষ নাকি রোবট। এটি একধরনের টুরিং টেস্ট। অ্যালান টুরিংয়ের নামানুসারে এমন নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তাই প্রথমে তাঁর ছবিটাই এঁকেছে আই-ডা।
শুরুতে আই-ডা টুরিংয়ের ১৫টি পোট্রেট আঁকে। সেখান থেকে ৩টা বাছাই করে। টুরিংয়ের পোট্রেটের পাশাপাশি রোবটটি তাঁর কোডব্রেকিং মেশিনেরও ছবি আঁকে। এরপর সেগুলোর ছবি তুলে একটা কম্পিউটারে পাঠানো হয়। সবশেষে চূড়ান্ত ছবিটা কেমন হবে, তা ঠিক করে ক্যানভাসে প্রিন্ট করা হয়। কম্পিউটারে এই চূড়ান্ত বাছাইয়ের কাজটাও করে আই-ডা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।