জুমবাংলা ডেস্ক : ‘বাংলাদেশে এইচআইভি ঝুঁকিতে তরুণ জনগোষ্ঠী:প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, এইডস প্রতিরোধে যুবসমাজের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তারা যদি এইডস সংক্রমণ বিষয়ে সচেতন হয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে এই রোগ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। সে জন্য তরুণদের এইডসের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে ও এইডস প্রতিরোধে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে সরকারের গৃহীত নানামুখী কার্যক্রমের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিস্তারিত কর্মসূচি নিতে হবে বলে আলোচনায় উঠে আসে।
বক্তারা আরো বলেন, এই সচেতনতার কাজটা শুরু করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘর থেকে। তাই মা-বাবা ও অভিভাবকদেরও সচেতন করে তুলতে হবে। এর জন্য সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে এবং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এইডস রোগকে প্রতিরোধ করতে দেশজুড়ে সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) ও একটি জনপ্রিয় দৈনিকের আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় উঠে এসেছে, এইডস সবচেয়ে বেশি ছড়ায় পরীক্ষা ছাড়া রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে, সিরিঞ্জে মাদক গ্রহণ, বিদেশ থেকে আসা শ্রমিক ও অভিবাসীদের মাধ্যমে এবং যৌনকর্মীদের কনডম ছাড়া যৌনমিলনের মাধ্যমে। তাই বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসবেন তাদের বাধ্যতামূলক রক্ত পরীক্ষা করা, যৌনমিলনে কনডম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষা কাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি ঠিকমতো স্টেরিলাইজ করা হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, এইডস একটা রোগ। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারো এইডস হলে তাকে ঘৃণা করার মানসিকতাও আমাদের দূর করতে হবে। কেননা, পৃথিবীতে এইডস হওয়ার প্রধানতম কারণ শুধু অনিরাপদ যৌনতা নয়। বরং অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ, সিরিঞ্জে মাদক গ্রহণে বিশ্বে অধিক মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, পরিবারের নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক বিধি-নিষেধ মেনে উন্নত জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, তরুণদের জন্য সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এইডসের ঝুঁকি থেকে তাদের দূরে রাখা সম্ভব হবে।
স্বাগত বক্তব্যে পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী এইডসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীকে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে। কেননা, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে এইডসের সংক্রমণের ঝুঁকি আগের তুলনায় বেড়েছে। তাই, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের এইডসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে ও বোঝাতে হবে। তা করা না গেলে দেশে এইচআইভি মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মূল প্রবন্ধে ডা. মো. মাহবুবুল আলম বলেন, এ বছর এইডসে আক্রান্ত ৯১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। সে লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের এইডস সচেতনতা বাড়াতে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ, মা-থেকে শিশুতে সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, এইডস আক্রান্ত শিশুদের যত্ন নেওয়া, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা কর্মসূচি, এইচআইভি সম্পর্কে শিক্ষা মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, গবেষণা ও বিশেষায়িত জ্ঞান ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, তরুণদের বিপথে যাওয়ার প্রবণতা বেশি, বেশি মাদক গ্রহণের হার। কারণ, তরুণরাই গ্রাম থেকে শহরে আসে কিংবা দেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যায়। তাই তরুণদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম বলেন, এইডস সম্পর্কে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে। এই ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। আর এ রোগ সম্বন্ধে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পালটাতে গণমুখী প্রচারণা চালাতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জয়নুল হক বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু সেই সাফল্যে সবচেয়ে বড়ো বাধা এইচআইভি এইডস নির্মূল করতে না পারা। তরুণদের সচেতন করতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ২০১৭ সাল থেকে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এটাও ঠিক দেশের পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে আরো বিস্তারিত কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এ বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন লাইট হাউজের প্রধান নির্বাহী হারুন অর রশীদ, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার, তরুণ প্রতিনিধি মো. শরীফ হোসেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের রিসার্চ অফিসার কানিজ ফওজিয়া খানম ও পপুলেশন কাউন্সিলের প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইরফান হোসেন। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।